আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চাঁদপুরের নৌপথের যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেনচাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ সকালে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ উপলক্ষে নদীপথে লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানের চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায় নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আসন্ন ঈদে দেশের বিভিন্ন নৌপথে জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এই সময় যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিটি লঞ্চকে শতভাগ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বিষয়টি লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ দেখবেন। ফিটনেসবিহীন কোন লঞ্চ ২৬ মার্চের পর চাঁদপুর-ঢাকা রুটে চলবে না। ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবেন না। লঞ্চ উঠা থেকে নামা পর্যন্ত প্রতিটি যাত্রীকে সঠিক সেবা দিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি লঞ্চে ৪ জন আনসার সদস্য থাকবে। যেখানে সেখানে নৌকা থামিয়ে যাত্রী তোলা যাবে না। ঈদের ৫ দিন পূর্বে যাত্রী নিরাপত্তায় লঞ্চঘাটে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। কোন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালক যাত্রী টানা হেচড়া করলে শুধুমাত্র ৫০০ টাকা জরিমানা নয়, পাশাপাশি তারা বাহনও জব্দ করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঈদের আগে এবং পরে নদীতে বাল্কহেড দিনে ও রাতে বন্ধ থাকবে। চাঁদপুরে যাত্রী পারাপারের জন্য দিনে স্পীড বোট চলবে, রাতে চলবে না। সময়টা অনেক খারাপ, তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে। যাত্রী কি নিয়ে লঞ্চে উঠছে, কি নিয়ে নামছে। এর জন্য লঞ্চঘাটে পর্যাপ্ত পরিমান আইন শৃঙ্খলাবাহিনী থাকবে। এছাড়া লঞ্চঘাটে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।
তিনি বলেন, অনেক যাত্রী ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদী দূষণ করে। বিষয়টি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন। প্রয়োজনে লঞ্চের প্রতিটি ফ্লোরে হ্যান্ড মাইক দিয়ে মাইকিং করতে হবে। একটি সুন্দর ঈদ উদযাপনে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান সভার সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) লুৎফুর রহমান, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের স্টেশন কমান্ডার সাব-লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হক, নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ পিপিএম, চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ- উপপরিচালক (ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য, চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএমএস ইকবাল, লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি মো. রুহুল আমিন হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সভায় বক্তারা ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সভাপতির বক্তব্যে নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান, তাঁর বক্তব্যে বলেন,লঞ্চে পলিথিন মোড়ানো খাবার বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। যাত্রীরা যদি খাবার সঙ্গে নিয়ে আসেন, তবে যেন কোনোভাবেই ব্যবহৃত পলিথিন নদীতে না ফেলে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।তিনি আরও বলেন, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। যাত্রীদের জোরপূর্বক লঞ্চে ওঠানোর জন্য টানা-হেঁচড়া করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। প্রত্যেক যাত্রী নিজ সুবিধামত লঞ্চে উঠবেন। লঞ্চের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও নির্দেশনা দেন যে, সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরা নির্ধারিত পার্কিং এলাকায় অবস্থান করবেন এবং যাত্রীদের টানাটানি করা থেকে বিরত থাকবেন। কোনো অবস্থাতেই সিএনজি বা অটোরিকশা চালকরা পল্টন পর্যন্ত যাত্রী নিতে পারবেন না। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট অনুসারে ভাড়া গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রুততম সময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে লাইসেন্স গ্রহণে সহানুভূতির আহ্বান জানান তিনি। শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন এবং পুলিশের কাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি লঞ্চে নামাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃক নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী লঞ্চ পরিচালনা করতে হবে। ২০ রমজান থেকে ঈদের কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রধান অতিথি জনাব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর, তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, লঞ্চে উপস্থিতির (Attendance) ব্যবস্থা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদীর মাঝখান থেকে নৌকা দিয়ে লঞ্চে যাত্রী ওঠানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। ঈদের পাঁচ দিন আগে এবং পাঁচ দিন পর পর্যন্ত লঞ্চঘাটে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
তিনি আরও নির্দেশনা দেন যে, সিএনজি ও অটোরিকশা চালকদের নির্ধারিত পার্কিং এলাকায় অবস্থান করতে হবে এবং লঞ্চের কাছে এসে যাত্রীদের টানাটানি করা যাবে না। ঈদ উপলক্ষে চুরি ও ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেন যে, স্পিডবোট কেবল দিনের বেলায় চলবে এবং রাতের বেলা স্পিডবোট চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। সভায় আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেÑ লঞ্চে যাত্রী ওঠানোর সময় টানাহেঁচড়া করা যাবে না, যাত্রী নিজ সুবিধামতো লঞ্চে উঠবে।
লঞ্চ কর্মচারীদের নারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সিএনজি ও অটোরিকশা নির্ধারিত পার্কিং স্থানে রাখতে হবে, কোনোভাবেই লঞ্চের কাছে এসে যাত্রীদের ডাকা যাবে না।স্পিডবোট শুধু দিনের বেলায় চলবে, রাতের বেলায় চলাচল বন্ধ থাকবে। লঞ্চে নামাজের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী লঞ্চ পরিচালনা করতে হবে। সভায় উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে যাত্রী, লঞ্চ মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় নৌ পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জন উপস্থিত ছিলেন।