দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানলে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দাবানলটি দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
শনিবার শুরু হওয়া অন্তত পাঁচটি দাবানল বৃহস্পতিবারের মধ্যে দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে। উইসেয়ং কাউন্টি থেকে উৎপন্ন দাবানলটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৮১,৫০০ একর এলাকা গ্রাস করেছে, যা এটিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক দাবানলে পরিণত করেছে। প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত বিস্তার লাভ করছে এবং নতুন নতুন এলাকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। ইতোমধ্যে আন্দং, উইসেয়ং, চেওংসং, ইয়ংইয়ং ও সানচেং-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।
দাবানলে প্রাণহানির পাশাপাশি ২৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দাবানলের কারণে ৩৭,০০০-এরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩০০-এর বেশি ঘরবাড়ি ও কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। হাজার বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মন্দির ও স্থাপনাও দাবানলে পুড়ে গেছে। উইসেয়ং শহরে ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বিখ্যাত গৌনসা মন্দির আগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, যা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অমূল্য সম্পদ ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৯,০০০-এরও বেশি অগ্নিনির্বাপক কর্মী এবং ৫,০০০ সামরিক কর্মী আগুন নেভাতে কাজ করছে। পাশাপাশি ১২০টিরও বেশি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পার্বত্য এলাকা হওয়ায় আগুন নেভানোর জন্য হেলিকপ্টারই মূল ভরসা। আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে বুধবার একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলে পাইলট নিহত হন।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, দাবানল কবলিত এলাকায় সামান্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও এটি দাবানল নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো ভূমিকা রাখবে না। শুষ্ক আবহাওয়া ও প্রবল বাতাস দাবানলের বিস্তারকে আরও তীব্র করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক আবহাওয়া ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে দাবানলের সংখ্যা এবং ভয়াবহতা বেড়েছে। ২০২৪ সালে ইতোমধ্যেই ২৪৪টি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২.৪ গুণ বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান দক সু এক বৈঠকে জানান, “এই দাবানল নজিরবিহীন দ্রুততায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা আমাদের জন্য জাতীয় সংকট সৃষ্টি করেছে।” তিনি আরও বলেন, দাবানল রোধে সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে কিছু পোড়ানো এবং ব্যক্তিগত অসাবধানতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন দপ্তরের প্রধান লিম সাং-সিওপ বলেন, “দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, কিন্তু প্রবল বাতাস ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন, সামরিক বাহিনী ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারও দাবানল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। তবে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে কতদিন লাগবে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানল সাধারণত বিরল হলেও এবারের ঘটনা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও আশঙ্কাজনক।