অর্থ আত্মসাত ও সরকারি জমি বিক্রিসহ নানা অভিযোগ

দিঘলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

এফএনএস (এম এ আজিম; খুলনা) : : | প্রকাশ: ১৭ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম
দিঘলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

সরকারি জমি বিক্রি, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতি, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাত ও আলোচিত খুলনার শেখ পরিবারের আস্থাভাজন দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার মোড়লের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার (১৭ মার্চ) দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যদের আগামী ১৪ কর্ম দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়লের

অপসারণের দাবিতে খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তার অপসারণের দাবিতে ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ এক প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে এলাকাবাসী।  প্রতিবাদ সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চৌরাস্তা মোড়ে শেষ হয়। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র জানান, ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার মোড়লের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোর আহমেদকে। এছাড়া সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হোসেন ও সদস্য করা হয়েছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধাকে। 

কমিটির সদস্যদের ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আদায়, আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত, টিআর-কাবিটা প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে অর্থ আত্মসাত, গভীর নলকূপের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এলজি এসপি প্রকল্প, হাট বাজার, উন্নয়ন তহবিল, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ ও কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে পুরাতন ইট ব্যবহার করে ও ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে কাজ জোড়া-তালি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তিনি শেখ পরিবারের কাছ থেকে ১০% কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও আওয়ামী লীগের দোসর আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

এর আগে ইউনিয়নের  বাসিন্দা ডা. হাফিজুর রহমান, শেখ সাজ্জাদ মোল্লা, লাল মামুর নিপু, রহিম শেখ ও  আলমাত শেখসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, সদর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়লের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমির পজিশন বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আদায়, আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা আত্মসাত, টিআর-কাবিটা প্রকল্পের কাজে নয়-ছয় করে অর্থ আত্মসাত, গভীর নলকূপের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এলজি এসপি প্রকল্প, হাট বাজার, উন্নয়ন তহবিল, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ ও কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে পুরাতন ইট ব্যবহার করে ও ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে কাজ জোড়া-তালি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তিনি শেখ পরিবারের কাছ থেকে ১০% কমিশন দিয়ে বহু ঠিকাদারী কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও আওয়ামী লীগের দোসর আলোচিত এই ইউপি চেয়ারম্যান এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। 

অপরদিকে, ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিঘলিয়া উপজেলার গোডাউন ও রেস্ট হাউজ রক্ষার অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন। হাসিনা পরিবার ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি ওই সম্পত্তি পরিদর্শনে আসলে তার মূখ্য ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। সেখানে দলের শীর্ষ নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যেতে না পারলেও হায়দার আলী মোড়ল শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হিসাবে ছিলেন। তিনি খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের  সদস্য এবং শেখ পরিবার ও সাবেক এমপি সালাম মূর্শেদীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ সুবাদে একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এর মাধ্যমে অল্প দিনেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ইউপি চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বেশ কিছু দিন আত্মগোপনে ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে সব পক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে পূণরায় স্বপদে ফিরে আসেন। এর আগে চেয়ারম্যান হায়দার আলী মোড়ল বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে উল্লিখিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে