রাজশাহীর বাঘায় ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক ঈদ মেলার সময় আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মেলার ইজারাদার উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শফিউর রহমান শফি। এ বিষয়ে মেলার ইজারাদার উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শফিউর রহমান শফি বলেন, সাত দিনব্যাপী ঈদুল ফিতরের দিন থেকে শাহদৌলা কলেজ মাঠ, হাইস্কুল মাঠ, মাজার চত্বরে মেলা বসে। মেলার সুন্দর পরিবেশ দেখে এবং আনন্দ উপাভোগ করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ আসেন। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য শর্ত সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়। ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য ঈদের দিন থেকে মেলায় লাখো মানুষের ঢল নামে। ঈদের নামাজ শেষে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই মেলায় আসতে শুরু করে। মেলায় হাজার হাজার ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে বসেছে। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে সার্কাস, যাত্রা, নাগর দোলা, মোটরসাইকেল, কারগাড়ি ঘোরান খেলা। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান উৎসব হলেও সব সম্প্রদায়ের মানুষ আসে এই মেলায়। মেলাই পাওয়া যাচ্ছে সব ধরনে মিষ্টি, বাচ্চাদের খেলনা, মনোহারি সামগ্রী, লোহাজাত দ্রব্য, কাঠের আলনা, চেয়ার, টেবিল, খাট, ড্রেসিং টেবিল, পালঙ্ক, শোকেচ, মাটির হাড়ি পাতিল, প্রসাধনী সামগ্রী, বেকারি দ্রব্যাদি, শামুকের মালা, কাঠের সামগ্রী, বেলুন, বাঁশি। এ ছাড়া রয়েছে ছবির দোকান, খাবার হোটেল, সদর ঘাটের পান, চা স্টল প্রভৃতি। মেলার আয়োজকরা জানান, মহৎ এক পুরুষ আব্বাসী। তার বংশের হযরত শাহ মোয়াজ্জেম ওরপে শাহদৌলা (র.) ও ছেলে হযরত আ. হামিদ দানিশ মন্দের (র.) ওরশকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন থেকে বাঘা ওয়াকফ এস্টেটের বিশাল এলাকাজুড়ে শুরু হয় মেলা। ঈদের তৃতীয় দিন ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে জোহর নামাজের পর তবারক বিতরণ করা হয়। রাজশাহী বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৪৯ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোনে বাঘায় হযরত শাহদৌলা (র.) ও ছেলে হযরত আ. হামিদ দানিশ মন্দ (র.) সাধনার পীঠস্থান। বাঘা শাহী মসজিদের ভিতরে প্রবেশ পথের উত্তর গেটের বামদিকে হযরত শাহদৌলা (র.) রওজা শরীফ অবস্থিত। ৫০০ বছর আগে বাগদাদ থেকে ৫ জন সঙ্গীসহ ইসলাম প্রচারের জন্য পূর্ব-দক্ষিণ কোনে পদ্মা নদীর কাছে বাঘা নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। তারপর নিজের চরিত্র, মাধুর্য্য, ব্যবহার ও আত্মিক শক্তির বলে এই এলাকার জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারে আকৃষ্ট করেন তিনি। এই এলাকার মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার আত্মিক ক্ষমতার প্রভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার স্মরণে ৫০০ বছর যাবত চলছে ঈদ মেলা। মেলা কমিটির সহসভাপতি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, শর্ত সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য মেলা ইজারাদার আবেদন করেছেন। আবেদনটি জেলা প্রশাসক স্যারকে প্রেরণ করেছি। এ দিকে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে মেলার আয়োজন করা হয়। যাতে কোনো অপ্রীতিকর না ঘটে, সে জন্য পুলিশ বাহিনী সতর্ক ছিল। উল্লেখ্য, ১০ শর্তে সাত দিন ব্যাপি ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক ঈদ মেলা ৮ লক্ষ টাকার জামানত সাপেক্ষে ইজারায় অংশ নেয় অত্র এলাকার ৬৮ জন ব্যবসায়ী। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১২ লক্ষ টাকায় ইজারা পেয়েছেন বাঘা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শফিউর রহমান শফি।