বেড়েই চলেছে রাজধানীর সড়কে অবৈধ বাসের দৌরাত্ম। ঢাকার মোট আয়তনের মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সড়ক। তার মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ রাস্তা গণপরিবহনের জন্য উপযুক্ত। আর সেখানে অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন। বলা যায় রাজধানীতে চলছে অনুমোদনহীন বাসের দৌরাত্ম্য চলছে। দেশের আন্তঃজেলার বাসগুলো অবৈধভাবে দিনরাত ঢাকার সড়কে সমানতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর নগরীর বিভিন্ন সড়কে ওসব বাসের কাউন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ওসব কাউন্টার ঢাকার যানজট ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য অনেকাংশেই দায়ী। পরিবহন খাত এবং বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর স্বল্প পরিমাণ সড়কে দেশের বিভিন্ন জেলার বাস অবৈধভাবে ব্যবহার করে চলছে। রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক, মিরপুর সড়ক, পান্থপথ সড়ক, কলাবাগানসহ রাজধানীর প্রতিটি সড়কে বিভিন্ন আন্তঃজেলা বাস দিন ও রাতে সমানতালে চলাচল করছে। তার মধ্যে রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে চলাচল করছে অনেকগুলো আন্তঃজেলা বাস। সেগুলো ফেনী, লক্ষ্ণীপুর ও নোয়াখালী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চলাচল করছে। একই রোডে চাঁদপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বাস চলাচল করছে। তাছাড়া খুলনা থেকেও ওই রুটে বাস উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে। একই রুটে শেরপুর থেকেও বাস চলাচল করছে। ওই রুটে চলাচলকারী আন্তঃজেলা বাসগুলোর ১০-১২টি পয়েন্টে কাউন্টার রয়েছে। তাছাড়া রাজধানীর কলাবাগান, শুক্রাবাদ, আসাদগেট, মালিবাগ, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, এয়ারপোর্ট এলাকায় দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর টিকিট কাউন্টার আছে। ওসব কাউন্টারের সামনে দিন ও রাতের বেলা নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস এসে থামে এবং চলে যাত্রী ও লাগেজ নামানো-তোলার কাজ। ফলে ওসব সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করে চলাচলের অনুমতি নেই। বিআরটিএ ওসব বাসের রুট পারমিটও দেয়নি। ওসব আন্তঃজেলা বাসগুলো অবৈধভাবে চলছে। পুলিশের ওসব অবৈধ বাস নিয়ন্ত্রণে মামলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করার কথা থাকলে পুলিশের সামনেই বাসগুলো চলছে। তবে সম্প্রতি বিআরটিএ ঢাকা থেকে নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন যাত্রীবাহী যেসব পরিবহন অবৈধ রুটে চলছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) বরাবর চিঠি দিয়েছে বিআরটিএ।
এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তঃজেলা বাস পৃথিবীর উন্নত শহরগুলোর কোথাও শহরের ভেতরে প্রবেশ করে না। ওসব বাসের টার্মিনালও শহরের বাইরে থাকে। তবে ওই টার্মিনাল ব্যবহার করা যাত্রীরা যাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পৌঁছতে পারে, সেজন্য রিং রোড, বাইপাস রোডের মতো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ঢাকার চিত্রটি ঠিক ভিন্ন। এখানে শহরের ভেতরেই তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। আবার আন্তঃজেলা বাসের একটা বড় অংশই টার্মিনালের বাইরে বিভিন্ন সড়কের ধার থেকে পরিচালিত হয়। যা যানজট ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা দুটোই বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিআরটিএর মুখপাত্র ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং শীতাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, টার্মিনালের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করে আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অনুমতি নেই। ওসব বাসের রুট পারমিটও বিআরটিএ দেয়নি। অবৈধভাবে ঢাকার সড়ক ব্যবহার করে চলছে আন্তঃজেলা বাসগুলো। ওসব অবৈধ বাস নিয়ন্ত্রণে মামলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ পুলিশের করার কথা। কিন্তু কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই।