নাটোরের লালপুরে ৪০ বছর ইমামতির দায়িত্ব পালন শেষে মসজিদের পেশ ইমাম জিল্লুর রহমানকে রাজকীয়ভাবে বিদায় জানানো হয়েছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) গোসাইপুর-মিল্কিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে ফুলে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় আবেগঘন পরিবেশে গ্রামের নারী-পুরুষরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
৭০ বছর বয়সী ইমাম জিল্লুর রহমান উপজেলার আড়বাব গ্রামের সোবহান মোল্লার ছেলে। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে টানা ৪০ বছর ধরে গোসাইপুর-মিল্কিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে এলাকাবাসী তার সম্মানে এই ব্যতিক্রমী বিদায়ী আয়োজন করেন।
বিকেলে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ফুলে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে তাকে আড়বাব গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই গাড়ির পেছনে ছিল গ্রামের যুবকসহ নানা বয়সী মানুষের মোটরসাইকেল বহর। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ প্রিয় ইমামকে শেষ বিদায় জানাতে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিদায়ী অভ্যর্থনা জানান।
মসজিদ কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, “ইমাম সাহেব ছিলেন আমাদের অভিভাবকতুল্য। তিনি শুধু ইমামতি করেননি, আমাদের জীবনের নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাই তার দীর্ঘ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এমন সম্মাননা দিয়েছি।”
বিদায়ী মুহূর্তে ইমাম জিল্লুর রহমান আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “জীবনের বড় একটি অংশ এই মসজিদ আর গ্রামের মানুষের মাঝে কেটেছে। আমি সারাজীবন দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলাম। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসেÑতা আগে বুঝিনি। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই, তিনি আমাকে এমন সম্মান দিয়েছেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”
গ্রামের ইতিহাসে এমন বিদায় আগে কখনও দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। ইমাম সাহেবের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।