শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার গাগ্রীজোড়া এলাকায় কৃষকদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রায় পাঁচশ একরের বেশি ফসলি জমি এখন পানির নিচে। একসময় এসব জমিতে ধান, পাট, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানান ফসল উৎপাদিত হতো, যা কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার অন্যতম মাধ্যম ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, কারণ একটি খালের মুখ বন্ধ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা কৃষকদের দুর্দশার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, মাত্র পাঁচ বছর আগেও এই জমিগুলোতে সজীবতা ছিল, কৃষকরা সারা বছর চাষাবাদ করতেন। কিন্তু উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের ফলে আজ এসব জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কের কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে খালের মুখসহ প্রায় ৪০০ মিটার অংশ ভরাট করে ফেলা হয়। এতে পানি প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। জমিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষকদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। যেসব কৃষক একসময় নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সংসার চালাতেন, তারা এখন উলটো বাজার থেকে খাদ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণের কারণেই খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় খালটির বিষয়টি পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হয়নি, ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, উন্নয়নের নামে যদি কৃষিজীবী মানুষের জীবিকা ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে সেটি কেমন উন্নয়ন? পরিকল্পনাহীন অবকাঠামো নির্মাণ শুধু কৃষকদের ক্ষতির কারণ নয়, এটি পুরো এলাকার অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সংকট নিরসনে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে খালের মুখ খুলে দিতে হবে এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেকোনো অবকাঠামো উন্নয়নের আগে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, যাতে এই ধরনের বিপর্যয় এড়ানো যায়। উন্নয়নের নামে কৃষকের জীবন-জীবিকা বিপন্ন করা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। অথচ কৃষিজীবী মানুষের দুর্দশার প্রতি যদি প্রশাসন উদাসীন থাকে, তাহলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। কৃষিজমি বাঁচানো, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই দেরি না করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে কৃষকরা আবারও তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারেন এবং নিজেদের স্বপ্ন পুনরায় গড়তে পারেন।