শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের আরও জোরালো ভূমিকা চেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "এই অভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথ সুগম করেছে।" তিনি চীনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের স্মরণ তুলে ধরে বলেন, তিনি সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার প্রসারে কাজ করেছেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে চীনের শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। তিনি জানান, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি করা হবে এবং চীনা উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরও আশ্বাস দেন, বাংলাদেশের উত্থাপিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চীন ইতিবাচকভাবে সহযোগিতা করবে, যার মধ্যে রয়েছে চীনা ঋণের সুদের হার হ্রাস ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা।
এ বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দ্য প্রেসিডেনশিয়াল হোটেলে চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগ’-এ অংশ নেন। এখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে চীনা ব্যবসায়ীদের অবহিত করা হয়।
এছাড়া, তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল— টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশে উৎপাদন ও বাজারের সুযোগ এবং সামাজিক ব্যবসা, যুব উদ্যোক্তা ও ভবিষ্যতের থ্রি-জিরো বিশ্ব।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সামাজিক ব্যবসায় বিশেষজ্ঞ ও চীনের স্বনামধন্য কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অধ্যাপক ইউনূস। সফরের অংশ হিসেবে তিনি চীনের একটি হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করেন, যেখানে ইলেকট্রিক ভেহিকল, সোলার প্ল্যান্ট ও চিপস উৎপাদনকারী কারখানার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সম্মানে আয়োজিত এক নৈশভোজেও অংশগ্রহণ করেন।
চার দিনের চীন সফরে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।