সরাইলের তেরকান্দা গ্রামে চুরি লুটপাটের তান্ডবে অতিষ্ট গৃহিনীরা

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : : | প্রকাশ: ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
সরাইলের তেরকান্দা গ্রামে চুরি লুটপাটের তান্ডবে অতিষ্ট গৃহিনীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের তেরকান্দা গ্রাম এখন পুরূষশুন্য। অধিকাংশ বসত ঘরে ও বাড়ির প্রধান ফটকে বাহিরের দিকে ঝুলছে তালা। গ্রামের গুরূত্বপূর্ণ তিন পয়েন্টে ২৪ ঘন্টা অবস্থান করছে ১২ জন পুলিশ সমস্য। দিনের বেলাই সর্বত্র বিরাজ করছে ভূতুড়ে অবস্থা। মসজিদে কমে গেছে মুসল্লি। স্কুলে হ্রাস পেয়েছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। সুযোগে দলবেঁধে কিছু যুবক ঘুরেফিলে দিনেরাতে ভাঙছে তালা। চুরি লুটপাটের সাথে চলছে আগুন তান্ডব। গরূ ছাগল ঘোড়া ও নলকূপের মাথাও রেহায় পাচ্ছে না। গোসল খাওয়া ঘুম ছেড়ে সর্বক্ষণ ভীতসন্ত্রস্থ ও আতঙ্কে রয়েছেন নারীরা। চোখে মুখে তাদের বিষন্নতার চাপ। 

সরজমিন অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগীরা জানায়, একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চুরির ঘটনায় তেরকান্দা গ্রামের দুই ব্যক্তির দ্বন্ধ সংঘর্ষ শেষ পর্যন্ত গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পরে। গোত্রগত সম্পর্ক, আত্মীয়তার বন্ধন ও সমর্থনে সেই সংঘর্ষ এক সময় গ্রামে খন্ড যুদ্ধের রূপ ধারণ করে। গত মঙ্গলবার ভোর বেলার সংঘর্ষে বল্লমের উপর্যুপোরি আঘাতে গুরূতর আহত হন হাদির বাড়ির জসিম ও তার ছেলে হৃদয়। বুধবার দিবাগত গভীর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জসিম মারা যায়। এই খবরে গ্রাম হয়ে পড়ে পুরূষ শুন্য। বৃহস্পতিবার রাতে জসিমের লাশ দাফনের আগেই গ্রামের ৩-৪ টি পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান নেয়। মসজিদ গুলোতে কমে মুসল্লিদের উপস্থিতি। লাশ দাফনের পর রাতেই গ্রাম জুড়ে চলে দল বেঁধে যুবকরা চালায় তালা ভাঙ্গা, চুরি ও মালামাল লুটপাটের তান্ডব। তারা জনমানব শুন্য অনেক ঘরের মালামাল সরিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ধান চাল নগদ টাকা স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। ১০-১৫ টি বাড়ির নলকূপের মাথা নিয়ে যায়। বাঁধা দিতে চাইলে মহিলাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বৃহস্পতিবার রাতের পর শুক্রবার দিনে ও রাতের লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকে গতকাল শনিবারেও। গতকাল দেখা যায় বিভিন্ন গ্রূপে বিভক্ত হয়ে যুবকরা সুযোগ করে বাড়ি ঘরে প্রবেশ করে লুটপাট করছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাঠের ধানের জমি বা খালে পালিয়ে যাচ্ছে। আবার সুযোগ বুঝে তারা বাড়িঘরে প্রবেশ করছে। মিন্টুর বাড়ির আকলিমা বেগম (২৯), রাশিদা বেগম (৫০), উচন মিয়া (৪০), নজুম উদ্দিনের বাড়ির আনোয়ার আলী (৮০), সোহেনা বেগম (৩০), জরিনা বেগম (৫০), রেহেনা বেগম (৬৫) ও মনোয়ারা বেগম (৩৫) বলেন, দিনে রাতে ঘরে প্রবেশ করে গলায় ছোঁড়া ধরে সব কিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে। কথা বলার কোন সুযোগ নেই। যাওয়ার সময় বিষয়টি কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক কষ্টে আছি। পুলিশ তো এক সাথে সমগ্র গ্রামে অবস্থান করতে পারেন না। গ্রামের দক্ষিণ পাশের অনেক লোক বলছেন, হত্যাকান্ডের পর গ্রামে কোন ধরণের উত্তেজনা নেই। আসামী পক্ষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। প্রথম দিন বাদী পক্ষের লোকজন ক্ষোভে চিৎকার চেচামেচি করলেও এখন আর আগের অবস্থা নেই। ওই গ্রামে অবস্থানকারী সরাইল থানার এস আই আবির আহমেদ বলেন, আজকে (গতকাল শনিবার) লুটপাট করতে পারছে না। গ্রামের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে থানার ৪ জন ও পুলিশ লাইনের ৮ জন সহ মোট ১২ জন পুলিশ সদস্য তিন পয়েন্টে বিভক্ত হয়ে দিনে রাতে পাহাড়া দিচ্ছি। প্রসঙ্গত: একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চুরির ঘটনায় গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ভোরে গ্রামের চান্দের গোষ্ঠী ও বারেকের গোষ্ঠীর লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দীর্ঘ সময় সংঘর্ষ চালায়। এক সময় গোটা গ্রাম দুই ভাবে বিভক্ত হয়ে খন্ড যুদ্ধ চালায়। ওই সংঘর্ষে গুরূতর আহত জসিম ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবারে মারা যায়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW