স্বাধীনতা দিবস: অর্জন ও ভবিষ্যতের পথ

এফএনএস : | প্রকাশ: ২৬ মার্চ, ২০২৫, ০৬:৩৪ এএম
স্বাধীনতা দিবস: অর্জন ও ভবিষ্যতের পথ

২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুরু। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা দেশকে একটি নতুন পথে পরিচালিত করেছিল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা, পেয়েছিলাম আমাদের জাতির অহংকার। স্বাধীনতা দিবস আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংগ্রামের একটি অমলিন স্মৃতি। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পরও আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আজ যখন আমরা মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি, তখন একদিকে আমরা যেমন ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, তেমনি অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা ও সংগ্রামও প্রতিফলিত হয়। স্বাধীনতার পর আমরা উন্নতির পথে অনেক দূর এগিয়েছি। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, শিক্ষাক্ষেত্রে আধুনিকায়নÑএসব বিষয় আমাদের অগ্রগতির সাক্ষী। তবে, এই অর্জনের সাথে কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আজও দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। যেখানেই দেখা যায়, শাসন ব্যবস্থায় দুর্বলতা, সমান সুযোগের অভাব এবং মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন প্রশ্ন ওঠে, আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? আমরা কি সত্যিই একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পেরেছি? বিশেষ করে, যখন কথা আসে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সমান সুযোগ, তখন যেন থমকে যায়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার হলেও দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদাÑখাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যÑপুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। দারিদ্র্যের হার এখনও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল যেন দেশের সব মানুষ পর্যন্ত পৌঁছায় না। যেখানে দেশের একাংশ উন্নতি করছে, সেখানে অন্য অংশের জন্য সেই উন্নয়ন একটি সুদূরপরাহত স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে, আমাদের অঙ্গীকার হতে হবেÑস্বাধীনতা অর্জনের পর যে গণতান্ত্রিক এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, তা যেন আমরা অর্জন করি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সুরক্ষিত হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। আজকের দিনে, যখন আমরা স্মরণ করি আমাদের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম, তখন আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও গুরুত্ব পায়। স্বাধীনতা দিবস শুধু একটি দিন নয়, এটি আমাদের মুক্তি, সংগ্রাম ও অর্জনের প্রতীক। ভবিষ্যতে যদি আমরা একটি উন্নত দেশ গড়তে চাই, তবে আমাদের এই পথে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ২৬ মার্চ আমাদের সেই শপথের দিন, যেদিন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, একটি সুন্দর, শক্তিশালী ও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে এবং দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে। এই মহান দিনটি যেন আমাদের পথ দেখায়, যেন আমরা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হই।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে