বিগত সময়ে দেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণের অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সেগুলো ফেরত আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় প্রয়োজনে পাচারকারীদের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে বলেও সম্প্রতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বস্তুত, অর্থ পাচার নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনা হলেও বাস্তবে পাচার রোধ কিংবা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। শুধু তাই নয়, রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালনের খবরও অতীতে বেরিয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদলের এ প্রেক্ষাপটে কেউ যাতে অর্থ তুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, তা প্রতিরোধে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব জব্দকরণসহ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল। পরিতাপের বিষয়, সার্বিকভাবে তা হতে আমরা দেখিনি। এছাড়া এখন পর্যন্ত পাচারকৃত টাকার প্রকৃত পরিমাণও জানা সম্ভব হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ ও বিধিবিধান অনুসরণের বিষয়। তা করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। আর তাই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে এর ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করাও প্রয়োজন। সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা যাতে নিশ্চিত হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। যেহেতু অর্থ পাচারের সঙ্গে হুন্ডির বিষয়টি সরাসরি জড়িত, সেহেতু এটি বন্ধেও নিতে হবে পদক্ষেপ। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে পাচারকারীদের প্রতি কঠোর মনোভাব থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। অর্থ পাচারকারী তো বটেই, পাশাপাশি এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে এ খাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অর্থ পাচার রোধে যা যা করা দরকার, তার সবই করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে তৎপর হতে হবে বলে মনে করি আমরা। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও তদন্তে দিতে হবে অধিক গুরুত্ব। আর যারা এর তদন্তে থাকবেন, স্বচ্ছতার স্বার্থে তাদেরও জবাবদিহির আওতায় রাখতে হবে। আমরা আশা করি, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।