রংপুরের তারাগঞ্জে বিয়ের দিন ঠিক করতে যাওয়ার পথে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন জামাই-শ্বশুর। রোববার (১০ আগস্ট) সকালে পুলিশ জানায়, আগের দিন শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। তারা সম্পর্কে জামাই-শ্বশুর।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, রূপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের সঙ্গে মিঠাপুকুরের শ্যামপুর এলাকার লালচাঁদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। রোববার (১০ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার কথা ছিল। সেই উদ্দেশ্যে শনিবার বিকেলে প্রদীপ দাস নিজের ভ্যান নিয়ে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু অচেনা গ্রামীণ রাস্তায় পথ হারিয়ে তিনি সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় গিয়ে রূপলালকে ফোন করেন। পরে দুজন একসঙ্গে রিকশায় ঘনিরামপুরের পথে রওনা হন।
রাত ৯টার দিকে বটতলা এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয় কয়েকজন ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের আটক করে। এরপর প্রদীপের ভ্যানে থাকা একটি বস্তা থেকে চারটি ছোট প্লাস্টিকের বোতল উদ্ধার করা হয়। একটি বোতল খুলে ভেতরের তরলের ঘ্রাণ নিতেই পাশারিপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আলমগীর হোসেন ও বুড়িরহাটের মেহেদী হাসান অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে উপস্থিত লোকজনের সন্দেহ আরও বেড়ে যায় এবং তারা রূপলাল ও প্রদীপকে মারধর শুরু করে।
পরে বটতলা থেকে টেনে-হিঁচড়ে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে গিয়ে আবারও তাদের পেটানো হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ অচেতন অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রূপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরে তিনিও মারা যান।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ ফারুক জানান, “চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।