ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত সুন্দরবন

এফএনএস (মোঃ রিয়াছাদ আলী; কয়রা, খুলনা) : : | প্রকাশ: ২৯ মার্চ, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে  প্রস্তুত সুন্দরবন

বিশ্বের সর্ব বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং বাঘ-হরিণের  অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের সুন্দরবন পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি  এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবন উপভোগ করেন। এ বছরও বিভিন্ন পর্যটন সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগের সহায়তায় সুন্দরবনের পর্যটন সেবা আরও উন্নত এবং নিরাপদ করা হয়েছ। যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন। এ বছর ঈদে সুন্দরবন ভ্রমনে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বতক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এ বছর বাঘের বাড়ি ইক্যুটুরিজম কেন্দ্র ঘুরতে পারবে পর্যটনরা। তাতে সুন্দরবনের আসল রুপ দেখতে পারবে।

খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে সুন্দরবন ভ্রমনের  অন্যতম পর্যটন স্পট হলো সুন্দরবনের শেখের টেক,কালাবগী ইকোট্যুরিযম কেন্দ্র, শিবসা নদীর তীরে রাজা প্রতাপাদিত্যের  প্রচীন দূর্গের ধ্বংসাবশেষ ৪০০ বছর আগের স্থাপনা, নীলকমল। এ ছাড়া কয়রার লোকালয় কেওড়াকাটা ও কাটকাটা পর্যটন স্পট, এসব আকর্ষণী স্থান সমূহ পর্যটক বরণে প্রস্তুত। এবার সুন্দরবন ঘিরে পর্যটনের দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটক সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে দ্বিগুণ রাজস্ব আয়ের প্রত্যাশা করছেন বন বিভাগ । পবিত্র ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে এসব পর্যটন স্পট গুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হবে। আনন্দ উপভোগ করার জন্য আগত পর্যটকদের বরণে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুুতি গ্রহন করেছে বন বিভাগ । এবার ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ গতি পাবে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। লম্বা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুরা যান্ত্রিক শহরের একটু ক্লান্তি দূর করতে ছুটে আসবেন পর্যটকরা। ঈদের ছুটিতে  পর্যটকদের অন্যতম  মিলনমেলা হবে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রায়।  পর্যটকদের আতিথেয়তার পসরা সাজিয়ে  অপেক্ষায়  ব্যবসায়ীরা। ঈদুল ফিতরের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূ‌মি সুন্দরবনে ঘুরতে আসার আগ্রহ বেশি ভ্রমণপিপাসুদের। এরই মধ্যে লঞ্চ, বোট বুকিং দিয়েছেন প্রচুর পর্যটক। আরও অনেকে এখনও বুকিং দিচ্ছেন। এদিকে, এবার প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসবেন এমন আশায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বনজ সম্পদ রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং নিরাপত্তা জোরদার করেছে বন বিভাগ।

সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন,  এখনো তেমন কোন পর্যাটকদের  সাড়া পড়েনি তবে আশা করছি এবার ঈদে লম্বা ছুটিতে সুন্দরবনে পর্যটক আসবে। সেজন্য বনের ভেতরে খুলনা রেঞ্জের কালাবগী ইকোট্যুরিযম কেন্দ্র,  শেখের টেক ও নীলকমলে নলীয়ান ও কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে পারমিট নিয়ে পর্যটকরা বনে প্রবেশ করতে পারবেন । পর্যটন স্পটগুলো নতুন করে সাজানো হয়েছে। ভ্রমন পিপাসু সুন্দরবন উপকূল ও সুরক্ষা বলয় কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর  অবসার প্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার  এম আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁরা এবার ঈদে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র ( পাস) নিয়ে 

৪নং কয়রা লঞ্চঘাট ও কাটকাটা লঞ্চঘাট থেকে  খুব কম সময়ে একদিনের জন্য সুন্দরবনের শেখের টেক,  শিবসা নদীর তীরে রাজা প্রতাপদিত্যের  প্রচীন দূর্গের ধ্বংসাবাশেষ, গাব বাগান, গহীন সুন্দরবনের শেখের খাল,ও বনের মধ্যে ৪০০ বছরের পুরনো স্থাপনা ও সুন্দরবনের নৈসার্গীক দৃশ্য উপভোগ করবেন। তিনি আরও বলেন, খুলনা জেলা শহর থেকে এসে চুকনগর- পাইকগাছা হয়ে  কয়রা থেকে খুব কম সময়ে সুন্দরবন ভ্রমন করা যায়। কয়রায় নির্মাণাধীন একমাত্র পর্যটন স্পট ' কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের দার উন্মোচিত হবে।' অপরদিকে এলাকাবাসী ও স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন আইসিডি'র দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কয়রা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে  ৬নম্বর কয়রা গ্রামে প্রস্তাবিত কেওড়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের কাজ ইতিমধ্যে চলমান আছে। এখানে গেলে পর্যটকরা পর্যটন স্পটের গাঁ ঘেঁসে গড়ে উঠা ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক( আদিবাসি) সম্প্রদায়ের  কালচার সম্পর্কে জানতে পারবে। কাশিয়বাদ স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুজ্জামান বলেন, এ বছর কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে শেখের টেক ইক্যুট্রুরিজম কেন্দ্র যাওয়ার জন্য পর্যটনদের অনুমতিপত্র প্রদান করা হবে। তাতে সহজে ভ্রমন করতে পারবে ভ্রমিন পিপাশু মানুষেরা

সরেজমিন গত শনিবার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার কাটকাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নদীর তীরে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্টে ঈদকে সামনে রেখে সাজসজ্জার কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাহিদ হাসান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার পরিছন্ন করছি। যাতে পর্যটকরা এসে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে আসতে পারে। আশ করছি অন্য বারের তুলনায় এবার সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক আসবেন।তিনি আরও বলেন, কয়রার কাটকাটা লঞ্চঘাট  থেকে সুন্দরবনের শেখের টেক, কলাগাছিয়া ও কালাবগী ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গুলো সহজে একদিনের মধ্যে ভ্রমন করা সম্ভব।

কয়রা কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ,ব,ম আব্দুল মালেক বলেন। দেশের সর্ব দক্ষিনে খুলনার কয়রায় পর্যটন শিল্পের অপর সম্ভাপনা থাকলেও যোগাযোগ ব্যাবস্থা ও প্রচার প্রচারনায় পিছিয়ে থাকার করনে পর্যটকরা জানেনা যে এই অঞ্চল দিয়ে খুব সহজে সুন্দরবন ভ্রমন করা যায় । কিন্তু পর্যায়ক্রমে সেটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  খুলনা জেলা শহর থেকে পর্যটকরা  মাত্র চার ঘন্টায় কয়রার সম্ভাবনাময়  পর্যটন স্পটগুলোতে পৌছাতে পারবে। তবে  যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতি ও ভালো মানের হোটেল এবং আবাসিক হোটেল স্থাপন করা গেলে পর্যটকের সাড়া পড়বে। পাশাপাশি  সরাসরি বাস (গেটলক) সার্ভিস কাটকাটা থেকে চালু করা যায় তাহলে আরো কম সময়ে পর্যটকরা ভ্রমন করতে পারবেন । 

কয়রা থানার (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা জি এম ইমদাদুল হক বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটকদের জন্য ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। কয়রা অঞ্চলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে।  যাতে পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে  ভ্রমণ শেষে বাড়িতে ফিরতে পারে। 

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের( ডিএফও) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষা ও  পর্যটকদের জানমাল রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ জন্য বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে। আশা করছি, এবার সুন্দরবনে বেশি পর্যটক আসবে এবং দ্বিগুণ রাজস্ব আয় হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে