পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু হাসি ফোঁটাতে ও স্বচ্ছলতার জন্য ঢাকার সাভারে গার্মেন্টসে চাকুরির জন্য পাড়ি জমায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের মাদরাসায় পড়ুয়া কোরআনের হাফেজ সুমন পাটোয়ারী। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সকলের সহযোগিতায় সংসারে আর্থিক কষ্ট দুর হলেও এখনো পরিবারে সবার মুখে হাসি ফিরে আসেনি। নিহত সুমন পাটোয়ারী (২০) দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মো. ওমর ফারুকের ছেলে। মো. ওমর ফারুকের দুই ছেলে এক মেয়ে। সুমন পাটোয়ারী মারা যাওয়ার পর এক মেয়ে ইশরাত জাহান উর্মি এবার এইচএসসি পরিক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে নবম শ্রেণিরছাত্র।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক অভাব ও দারিদ্রতার কারণে সুমন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর স্থানীয় মাদরাসায় পড়াশুনা করে কোরআনের হাফেজ হন। করতেন স্থানীয় এক মসজিদে ইমামতির চাকুরি। কিন্তু এতে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ নির্বাহ করা খুব কষ্টকর হয়ে পাড়ে। তাই সংসারের স্বচ্ছলতা এবং পিতামাতার মুখে হাসি ফোটাতে বাধ্য হয়ে ছুটে যান ঢাকার আশুলিয়ায় চাকুরির জন্য। সেখানে ভাড়া বাড়িতে থেকে সুমন একটি গার্মেন্টসে কাজ নেন। গত ৫ই আগস্ট বিকাল ৩ টায় সুমনসহ কয়েকজন বন্ধু বাইরে বের হয়। ওইদিনই বিকাল ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালনকারীর কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে সেখান থেকে সুমনের অন্য বন্ধুরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এসময় সুমন পালাতে পারেনি। ছোঁড়া গুলি সুমনের মাথায় লেগে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরদিন ৬ই আগস্ট সকাল ১১টায় চিরিরবন্দরের অমরপুর ইউপির শান্তির বাজারের লক্ষিপুর গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পিতামাতা। স্থানীয়সহ জামায়াত-বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠন তাদের পরিবারের সাহায্যের হাত নিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
সুমনের বাবা মো. ওমর ফারুক জানান, ছেলে আমাদের পরিবারের একটু সুখের আশায় ঢাকার আশুলিয়ায় কাজের সন্ধানে যায়। কিন্তু সেই সুখ আর আমাদের কপালে সইলো না। সে আমাদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে আসল না। এলো তার লাশ। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন, বিএনপি, জামায়াতসহ ভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সকলের আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে আর্থিক কষ্ট নিবারন হয়েছে। কিন্তু পবিত্র ঈদের আনন্দ যেন আমাদের পরিবার থেকে হারিয়ে গেছে। সবকিছুতেই তার কথা মনে পড়ছে।