কুষ্টিয়ার খ্যাতিমান শিক্ষানুরাগী প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন ফাউন্ডেশনের বেলায়েত হোসেন শিক্ষা বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হয়েছে। বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে কুষ্টিয়া শহরের দিশা টাওয়ার মিলনায়তনে আয়োজিত বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে কুষ্টিয়া জেলার এস.এস.সি ও সমমান পরীক্ষা-২০২৩ সালে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলা থেকে বাছাইকৃত জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫০ জনকে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়।আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন শিক্ষা বৃত্তি ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্টপোষক,ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব বশির আহমেদের সভাপতিত্বে বৃত্তি প্রদানপূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আমজাদ হোসেন খাঁন।
এসময় তিনি বলেন, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নের সুযোগ পাচ্ছে না, উচ্চ শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। কেউ কেউ প্রাথমিক স্তর পার না হতেই ঝড়ে পড়ছেন। দারিদ্র্যতার কারণে ঝড়ে পড়ার ফলে মেধাহীন হয়ে পড়ছে। তাই মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে এমন শিক্ষাবৃত্তি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতে পারছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বিত্তশালীরা সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিত্তশালীরা যদি মনে করেন মেধাবী অথচ অস্বচ্ছল তাকে আর্থিক সহযোগীতার আওতায় আনবেন আমাদের শিক্ষায় মেধার শুন্যতা, মান আরও বৃদ্ধি পাবে। এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহযোগীতার প্রসার ঘটলে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশে বির্নিমানের স্বপ্ন দ্রুত পুরণ হবে।
আগামী প্রজন্মকে মেধা মননে আলোকিত করতে হলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে আর্থিকভাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজকে ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’র স্বপ্নদ্রষ্টা যে মহত উদ্যোগ গ্রহন করেছেন আজকে ৫০ জনকে নগদ ১০ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগীতা করে। অন্য বিত্তশালীরা তাকে অনুসরণ করে এগিয়ে গেলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। সভাপতির বক্তব্যে ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোঃ বশির আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি বলেন আমি কেবল তোমাদের মঙ্গল কামনার জন্য এখানে এসেছি। ১৯৮০ সালে আমি ব্যবসা শুরু করি।
আমার পিতা ছিলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষার মর্যাদা এবং গুরুত্ব আমি অন্তর দিয়ে অনুধাবন করি। আমি আমার বাবার জন্য গর্বিত। চারবার আমার বাবা ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ভালো মানুষের সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। পিতার নামে আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন ফাউন্ডেশনের নামে শিক্ষা, চিকিৎসা সহায়তাসহ অনেক সামাজিক কাজে আত্মনিয়োগ করার চেষ্টা করি আজকে এটা তারই একটা অংশ। আমি মনে করি এস.এস.সি পাশের পর উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য এ টাকা কিছু নয়। তারপরও মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে উৎসাহ পায়, উচ্চ শিক্ষায় আরও এগিয়ে যায় সে জন্য এ উদ্যোগ। তিনি বলেন, আজকে ৫০ জনের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দিচ্ছি, আগামীতে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছাও রয়েছে। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি চাই আজকের এই অনুষ্ঠানে বক্তাদের বক্তব্য শুনে তোমাদের অনেক জ্ঞানের প্রসার ঘটবে, বাড়িতে ফিরে তার শিক্ষামুলক কথা মাথায় এনে নিজের জীবনে কাজে লাগাবে। উচ্চ শিক্ষা যেমন মেডিকেলে, বুয়েটে চান্স পাওয়ার যদি কোন সহযোগীতার প্রয়োজন হয় তখনও বেলায়েত হোসেন ফাউন্ডেশন তোমাদের পাশে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ৪৫ বছর ধরে আমি ব্যবসা করছি, তামাক ও পাটের ব্যবসা থেকে শুরু করে আজ বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। যার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার মানুষ এই কুষ্টিয়া জেলার।
আমি আরও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অনেক ইচ্ছে কুষ্টিয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো। যদিও বা কিছু বাঁধা আসে। তবুও আমি আমার এই নিজের জেলায় আরও মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করবো। আসুন আমরা সকলেই মিলে হাতে হাত রেখে এই কুষ্টিয়ার উন্নয়নে কাজ করি। অনুষ্টানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক নাজমুল হুদা।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল কবির, ময়মনসিংহের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ও বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ডীন শেখ সুজন আলী, ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’র চেয়ারম্যান নার্গিস আহমেদ,
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুর রশীদ বকুল, জাতীয় সাঁতার প্রশিক্ষক ও আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন শিক্ষাবৃত্তির আহবায়ক আমিরুল ইসলাম। সার্বিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আলহাজ্ব বেলায়েত শিক্ষাবৃত্তি ফাউন্ডেশনের সদস্য হাফিজ আল আসাদ।
পরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫০ জনকে বৃত্তি প্রদানের ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের অন্যতম সদস্য,বিশিষ্ট সাংবাদিক কাঞ্চন কুমার হালদারসহ ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সুধীজন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরান তেলওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয়। এর পর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা ঘটে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ ও সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।