টাঙ্গাইলে অটোরিকশার রাজত্বে নাকাল শহরবাসী

এফএনএস (টাঙ্গাইল) : : | প্রকাশ: ২৭ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
টাঙ্গাইলে অটোরিকশার রাজত্বে নাকাল শহরবাসী

টাঙ্গাইল শহরের প্রতিটি সড়কেই আগের যেকোন সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি চলাচল করছে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা। অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক চালকদের হাতে স্টিয়ারিং থাকায় অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক সময় ডান-বাম না দেখে কিংবা সিগন্যাল না মেনে এক পায়ের উপর ভর করে অটোরিকশা যত্রতত্র ঘুড়াতে(টার্ণ) গিয়ে উল্টে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। শহরের অলি-গলিতে গড়ে উঠেছে এসব অটোরিকশার গ্যারেজ। ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এসব অটোরিকশা শহরে চলাচল করে থাকে। এগুলোর গ্যারেজে রাতভর বৈদ্যুতিক লাইনে ব্যাটারী চার্জ দেওয়ার কাজ চলে। চার্জ পূর্ণ হলে চালকরা সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। সারারাত চার্জ দেওয়ায় প্রচুর বিদ্যুত খরচের ফলশ্রুতিতে শহরে লোডশেডিং ঘটছে। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন এসএম সিরাজুল হক আলমগীর। তিনি ২০২১ সালের ১১ মার্চ টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ১০০টি, একই সালের ২৮ জুন এক হাজার ১০০টি, ওই সালের ৩১ অক্টোবর পুনরায় দুই হাজারটি এবং ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি এক হাজার ৮০০ সহ মোট ৬ হাজার অটোরিকশার অনুমতি দেন। সাবেক মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে ৩ হাজার ২২০টি ইজিবাইকের চালকদের ও দুই হাজার ৪৩৪ টি অটোরিকশা চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেন। এসব অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দিতে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। শহরের আদি টাঙ্গাইল ও বাজিতপুর এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে শেরপুর, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আসলাম, হুমায়ুন, জাহাঙ্গীরসহ বেশ কয়েকজন ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, শহরে এসব অটোরিকশা চালানো অবৈধ, তবুও পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালান। ভাড়া বেশি হওয়ায় টাঙ্গাইল শহরে অটোরিকশা চালিয়ে ভালোই আয় হয়। অটোরিকশা চালিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ডাল-ভাতে দিন চলে যাচ্ছে। অটোরিকশা চালক শাহজাহান জানান, তিনি আগে সরিষাবাড়ি এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। এ কাজে উপার্জন কম হওয়ায় তার বন্ধু মানিকের পরামর্শে টাঙ্গাইল শহরে অটোরিকশা চালাতে আসেন। এ শহরে অটোরিকশা ও ইজিবাইক ভাড়া বেশি হওয়ায় সারাদিনে ভালোই আয় হয়। গ্যারেজ ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়েও দিন শেষে এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা রোজগার করা যায়। শহরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে- টাঙ্গাইল শহরের আদি টাঙ্গাইল, বাজিতপুর, কাজীপুর, বালুচড়া, বেবীস্ট্যান্ড, কান্দাপাড়া এলাকা, কলেজপাড়া, বেড়াডোমা, নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা, কোদালিয়া, সাবালিয়া, বৈল্যা বাজার, আশেকপুর, রাবনা বাইপাস এলাকায় বিভিন্ন পরিত্যাক্ত ও অব্যবহৃত জায়গায় গড়ে উঠেছে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চার্জের শ’ শ’ গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে রাতে প্রতিটি অটোরিকশা বা ইজিবাইক অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চার্জ দেওয়া হয়। এতে প্রতিদিনের সরবরাহকৃত  বিদ্যুতের একটা বড় অংশ চলে যায় অটোরিকশা ও ইজিবাইক চার্জে। সাধারণত একটি ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা চালানোর জন্য ১২ ভোল্টের ৪টি ব্যাটারীর প্রয়োজন হয়। প্রতি সেট ব্যাটারী চার্জের জন্য মাসে বিদ্যুত খরচ হয় ন্যূনতম তিনশ’ থেকে সর্বোচ্চ চারশ’ ইউনিট। ফলে এখাতে ব্যয়িত বিদ্যুতের ঘাটতি সাধারণ নাগরিক জীবনে পড়ছে। কুমুদিনী সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শির্ক্ষাথী ইতি, সাদিয়া, তমা সহ অন্যরা জানান, এ ছোট শহরে এতো অটোরিকশা ও ইজিবাইকের প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত তিন চাকার যানের কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টা সময় রেগে যায়। ভাড়াও অনেক বেশি। অসহনীয় যানজট এড়াতে শীঘ্রই এ অবৈধ অটোরিকশা তুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা। পথচারী আহাদ মিয়া জানান, অটোরিকশার টুং টাং কর্কশ শব্দের যন্ত্রণায় শহরে চলাচল করা দায়। এতো ছোট জায়গায় এতো তিন চাকার যানবাহন কী দরকার? এসব অবৈধ যান বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করে টাঙ্গাইল বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, কার্যত এসব অটোরিকশা ও ইজিবাইক শহরে চলাচল অবৈধ। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী এসব যানবাহনের কোনরূপ বৈধতা নাই। পৌরসভা বা সিটি র্কপোরেশন এসব অটোরিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়ে থাকে। যাদেরকে লাইসেন্স দেওয়া হয় তারা ট্রাফিক আইন-কানুন জানে না। রাস্তার কোথায় পার্ক করা যাবে বা কোথায় থামা যাবে আর কোথায় থামা যাবে না- এ বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নাই। আসছে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির  মিটিং এ বিষয়ে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জেলা ট্রাফিক পুলিশের প্রশাসক (টিআই-১) মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, টাঙ্গাইল পৌরবাসীর প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত অটোরিকশা ও ইজিবাইক রয়েছে। জেলা পুলিশ সার্বক্ষণিক যানজট নিরসনে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে যানজটমুক্ত টাঙ্গাইল গড়তে ট্রাফিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যানজট নিরসনে আলোচনা চলমান আছে। দ্রুতই যানজট থেকে টাঙ্গাইলবাসী মুক্ত হবেন বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, শহরের যানজট নিরসনে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার বিষয়ে পৌরসভা সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে