ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এই রায় দেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সরকার গেজেট প্রকাশ করে। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও নির্বাচিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।
বৃহস্পতিবার আদালত রায় প্রদান করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট বাতিল করে দেন এবং ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেন। আদালতে রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন ইশরাক হোসেন। রায় ঘোষণার পর তাঁর সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে বিজয় মিছিল করেন।
ইশরাক হোসেনের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, "অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার কারণে আমরা এই নির্বাচন বাতিলের আবেদন করেছিলাম এবং ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।" অপর এক আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, "এই রায় আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।"
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের নির্বাচনে ইভিএম মেশিনে কারচুপি, ভোটারদের বাধা প্রদান, নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা, পোস্টার ছেঁড়া ও মাইক ভাঙচুরের মতো অনিয়মের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচনের দিন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় এবং তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
আদালতের রায়ের পর শেখ ফজলে নূর তাপসের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্র জানায়, তিনি সরকারের পতনের আগেই দেশ ছেড়েছেন। অন্যদিকে, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে গত বছর ১৬ অক্টোবর রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন। মামলার নিষ্পত্তি ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আপিল ট্রাইব্যুনালে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে, যা ১২০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে।
এই রায়ের মাধ্যমে নতুন এক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা তৈরি হলো। ইশরাক হোসেন এখন কীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর মেয়াদ কেমন হয়, সেটাই এখন সবার নজরে।