মহান মুক্তিযুদ্ধের ৬নং সেক্টরের প্রথম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লুৎফর রহমানের ৫৪ তম শাহাদত বার্ষিকী বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মষূচীতে পালন করেছে ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব পরিবার।
২৮ মার্চ শুক্রবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীতে ছিল শহীদ রুৎফর রহমানের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান, দোয়া ও ইফতার মাহফিল। দিনব্যাপী এ কমূসূচীতে ৫৪ বছর পর প্রথমবারের মতো শহীদ লুৎফর রহমানের একমাত্র পুত্র সন্তান মতিউর রহমান ও তার পরিবারের ৪ সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ৫৪ বছরে তারা জানতেন না কোথায় শহীদ লুৎফর রহমানের কবর। ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব-এর গণমাধ্যম কর্মীদের সুবাদে জানতে পেরে ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে শায়িত শহীদ লুৎফর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীতে অংশগ্রহণে সুদুর নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলা থেকে ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফুলাবাড়ীতে আসেন তারা।
২৮ মার্চ ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব সংলগ্ন ফুলবাড়ী উপজেলার প্রথম শহীদ মিনার চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শহীদ লুুৎফর রহমানের একামাত্র সন্তান মতিউর রহমান, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মামুনুর রশীদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মজিবর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর।
এতে সভাপতিত্ব করে ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব-এর উপদেষ্টা ইউসুফ আলী সংগ্রামী, সঞ্চালনা করেন প্রেস ক্লাব সভাপতি সাংবাদিক ইউনুছ আলী আনন্দ। আলোচনা সভার ফাঁেক শহীদ লুৎফর রহমান নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন ফুলবাড়ী সাহিত্য পরিষদ-এর উপদেষ্টা চারণ কবি আজিজুল হাকীম মন্ডল।
এতে অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফছার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনসহ ফুলবাড়ী উপজেলা বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ।
আলোচনা সভা শেষে শহীদ লুৎফর রহমানকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করেন ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই সম্মাননা স্মারকটি গ্রহণ করেন শহীদ লুৎফর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান।
বক্তব্যে শহীদ লুৎফর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান বলেন, আমার বয়স যখন ২ বছর তখন আমার বাবা লুৎফর রহমান বাংলাদেশ নামের ভুÑখন্ডকে বিজয় করার জন্য পাকহানাদারদের সঙ্গে সম্মূখ যুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধের পর আমরা জানতাম না আমার বাবা কোথায় আছে বা তার কবর কোথায়।
ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব-এর সাংবাদিকদের সংবাদের মাধ্যমে আমরা শহীদ ৫৪ বছর পর শহীদ লুৎফর রহমানের কবরের খোঁজ পেয়ে ২৮ মার্চ এখানে ছুটে এসেছি। আমার বাবার কবর স্ব-চোখে দেখতে পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত। আমার পরিবার স্বার্থক। আমার প্রতি ফুলবাড়ী উপজেলাবাসীর সম্মানের জন্য আমি ফুলবাড়ী বাসীকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টরের প্রথম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লুৎফর রহমান ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতাযুদ্ধ ঘোষণার দুইদিন পর ২৮ মার্চ পাক পাকিনীর সঙ্গে সম্মূখযুদ্ধে লালমনিরহাট জেলার নেছরিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তিনি জীবদ্দশায় ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের গংগারহাট ক্যাম্পে ইপিআর পদে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় ফুলবাড়ীতে একদল পাক বাহিনী প্রবেশ করলে লুৎফর রহমান তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। তাদেরকে পরাস্থ করার জন্য তিনি সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে পাক বাহিনীর পিছু নিলে এক সময় লালমনিরহাট জেলার নেছরিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় পাক বাহিনীর সঙ্গে লুৎফর রহমানের সম্মূখযুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন লুৎফর রহমান।
পরবর্তীতে তার সহযোদ্ধারা শহীদ লুৎফর রহমানের মরদেহ লালমনিরহাট থেকে এনে ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় দাফন করেন। এই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান ও স্মরণীয় করে রাখতে ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব ও ফুলবাড়ী সাহিত্য পরিষদ প্রতিবছর ২৮ মার্চ তার শাহাদত বার্ষিকী পালন করে থাকে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সাথে শহীদ লুৎফর রহমানের শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া করে থাকেন। শহীদ লুৎফর রহমানের নামে ফুলবাড়ী মডেল প্রেস ক্লাব এর সভা কক্ষকে ‘শহীদ লুৎফর রহামান মিলনায়তন’ নামকরণ করা হয়েছে। এখানে একটি সড়কের নামকরণ হয়েছে শহীদ লুৎফর রহমান সরণি।