ভারতের গৌতম আদানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে আবারও পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। বিল বকেয়া থাকার কারণে গত বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হলেও সম্প্রতি নিয়মিত পরিশোধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ আবারও প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ফলে, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনে আদানি পাওয়ার। তবে, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ শুরু হওয়ায় পুনরায় ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে আদানিকে অর্থ পরিশোধ করছি এবং আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি।’ যদিও তিনি পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ বা আগের বকেয়া সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার আশপাশে পৌঁছে যায়, যার ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার হওয়ায় দেশে লোডশেডিং কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আদানির কাছে বাংলাদেশ সরকারের বকেয়া বিল একসময় ৮৫০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, যা বর্তমানে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, বিপিডিবি আদানির ঋণদাতাদের আশ্বস্ত করতে গ্যারান্টিও দিয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানটি কার্যকরী মূলধনের সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে।
আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির বিদ্যুতের মূল্য ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দামের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ বেশি। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে, যা এখনো পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী জ্বালানি সহযোগিতার ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় পূর্ণমাত্রায় ফিরে আসায় বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।