রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও আমদানি বৃদ্ধিতে বেড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:১১ এএম
রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও আমদানি বৃদ্ধিতে বেড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও আমদানি বৃদ্ধিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ৪৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এলসি খোলায় ডলারের সহজলভ্যতার পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকি রোধ করায় রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বেড়েছে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই দেশের সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। আর চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বাংলাদেশের মোট রাজস্বের ১৭ শতাংশ জোগান দেয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায় আগের অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার ৩৮২ কোটি এক লাখ টাকা বেশি করেছিলো। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চট্টগ্রাম কাস্টমসকে ৮৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ। অর্থাৎ বাড়তি আদায় হয়েছে চার হাজার ৮০১ কোটি টাকা। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই ৬ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। যা এক মাসে রেকর্ড রাজস্ব আদায়। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা রাজস্ব। ওই হিসাবে এক মাসেই প্রবৃদ্ধি ৫১.৯৭ শতাংশ।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে বিগত বছরগুলোতে শুল্ক পরিশোধ ছাড়াই পণ্য ছাড় করে নেয়ার প্রবণতা ছিল বেশি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হতো। কিন্তু এখন কাস্টমের কঠোর অবস্থানে সেই প্রবণতা অনেকটা কমে আসছে। তাছাড়া সামপ্রতিক বছরগুলোতে ডলার সংকটের কারণে আমদানি কিছুটা কম হলেও অর্থবছরের মাঝামাঝিতে ডলার সংকট কাটতে শুরু করায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির এলসি খোলার সুযোগ পেয়েছে। যার প্রভাব রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও পড়েছে।

এদিকে রাজস্ব আদায় বাড়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল ইসলাম জানান, বিগত সময়ে দেশে একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের প্রভাবে ব্যবসায়ীরা জিম্মি ছিলেন। তাদের অনেকেই জোরে শুল্ক ফাঁকিসহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলো। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা এসেছে। ব্যবসায়ীরা সহজে এলসি খুলতে পারছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি কার্যক্রমও চালাচ্ছে। কাস্টমসের রাজস্ব আহরণে তারই প্রভাব পড়েছে। যেজন্য রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তবে কাস্টমস ও এনবিআরকে আরো বেশি আধুনিক হতে হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ও হয়রানিমুক্তভাবে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে পারে সে সুবিধা দিতে হবে। তাহলে রাজস্ব আদায় আরো বাড়বে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও আমদানি বেড়েছে। একই সঙ্গে কাস্টমস শুল্কায়নপ্রক্রিয়ায় অনেক কঠোরতা আরোপ করায় শুল্ক ফাঁকি কমেছে। ফলে বেড়েছে কাস্টমের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW