পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বেতনের টাকা প্রণোদনার তহবিল থেকে ছাড় করার পর সেই অর্থ ঋণ সমন্বয়ের নামে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "প্রিমিয়ার ব্যাংকের এমডিকে বলছি, অবিলম্বে শ্রমিকদের পাওনা টাকা রিলিজ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য, ব্যাংকের ঋণ সমন্বয়ের জন্য নয়।" তিনি আরও বলেন, "যদি টাকা না দেওয়া হয়, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংক, শাখা ও এমডির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তবে টিএনজেড অ্যাপারেল ইকোসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক সেই অর্থ ঋণ সমন্বয়ের নামে আটকে রেখেছে। এতে করে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন এবং অসন্তোষ দেখা দেয়।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, "প্রিমিয়ার ব্যাংক যদি এই অর্থ পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে। সরকার শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যদি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করা হয়, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
উপদেষ্টা জানান, ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে জটিলতায় থাকা পাঁচটি কারখানার সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, "সবাই বেতন পরিশোধ করেছে। কিছু মালিক বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিলেন, তারা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের প্রমাণ দেখালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।"
রোয়ার ফ্যাশন নামের একটি কারখানার মালিক পলাতক থাকায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে জটিলতা দেখা দেয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আপদকালীন তহবিল থেকে এক কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়।
উপদেষ্টা আরও জানান, মাহমুদ গ্রুপের দুটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্টাইলক্রাফট ও ইয়াং ওয়ান লিমিটেডের বিষয়েও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিক। কোনো কারখানা বা ব্যাংক যদি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে বাধা দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তিনি আরও বলেন, "শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করতে সরকারের দেওয়া তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক যদি শ্রমিকদের পাওনা টাকা আটকে রাখে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সরকারের কঠোর মনোভাবের ফলে অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তবে তিনি ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।