চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান একেরপর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক সমালোচনার চলছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে ঈদের দুদিন পূর্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা ও যুবদলের ১ নেতাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে সর্বত্রই তার বিরুদ্ধে আলোচনা সমালোচনার চলছে । শুধু তাই নয় সীতাকুণ্ড থানার ওসিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই বলেও এলাকায় দল মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক মহলে হাস্যরস করা হচ্ছে। তাকে অনেকেই লীগের দোসর বলেও আখ্যায়িত করেছে।
এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান ৫ আগস্টের পর থেকেই পতিত স্বৈরাচারী শক্তির পক্ষে কাজ করছেন। তার কর্মকাণ্ড নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তরায়। তিনি অপারেশন ডেভিল হান্টে কোন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেননি। শুধু তাই নয় গ্রেপ্তার হওয়া চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরেও ছেড়ে দিয়েছে এ ওসি। এসব কারণেই তার প্রতি এলাকায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
হাসান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, তিনি দেশে বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন সরকার এসেছে এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ তা ওসি মজিবুর বিশ্বাস করেন বলে মনে হয়না। তার কথায় ও কর্মকাণ্ডে স্বৈরাচারী পুলিশের আচরণের মতো মনে হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ডেভিল হান্ড অপারেশন ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সারা দেশের শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম সীতাকুণ্ড উপজেলা। এখানে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার দূরের কথা উল্টো বিএনপির নেতা কর্মীরা পুলিশের হাতে নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছে। শুধু তাই নয় অনেকেই জেল ও খেটেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামশেদ হোসেন একজন তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, আমার ভাই আগে ঈদ করতে পারতো না আওয়ামী লীগের কারণে। আর এখন ঈদ পালন করতে পারেনি ওসি মজিবুর রহমানের কারণে। তিনি আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে।
সাইফদ্দিন নামে অপর একজন তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, মূল আসামিকে আড়াল করতেই ওসি স্বেচ্ছাসেবক দলের ও যুবদলের নেতাদের পরিকল্পিতভাবে আসামি করেছেন। এভাবে যাকে-তাকে আসামি করলে নিরীহরা যেমন হয়রানি হবেন তেমনি মামলার রহস্য উদঘাটন হবেনা, ভুক্তভোগীরাও বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। এভাবে বিভিন্নজন তাদের ফেসবুক আইডি থেকে ঈদের পরদিন থেকে গত ৩/৪ দিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীতাকুণ্ড ওসির বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা করছেন। এক কথায় বলতে গেলে সীতাকুণ্ড থানার ওসির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
উল্লেখ্য গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে নৃশংসভাবে কৃষকদলের নেতা নাছির উদ্দীনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চা খাওয়ার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা ও এক যুবদল নেতাকে নাসির উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার করেন। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বশির বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি, আনোয়ার হোসেন উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য, আরমান শাকিল মুরাদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য সচিব, রাসেল মুরাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সেক্রেটারি।
নিরপরা এই নেতাদেরকে খুনের মামলায় গ্রেফতারের ঘটনায় বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়ন আসলাম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি গত ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের জামাতে প্রশাসন ও মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা প্রশাসনকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি এবং ভবিষ্যতেও করব। যেকোন ক্ষেত্রে প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা পাবে। কিন্তু ওসির কক্ষে বসে বিএনপি'র ত্যাগী ও কারা নির্যাতিত নেতাদের পরিকল্পিতভাবে আসামি করা হয়েছে। এই ছেলেগুলো আমার সাথে দীর্ঘদিন জেলে ছিল। আপনি যদি কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এই মামলা করেন তাহলে আপনি বাংলাদেশের যেখানেই থাকুন না কেন আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি কৃষক দলের নেতা নাছির হত্যার তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। তারা যদি দলের লোকও হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
গ্রেপ্তারকৃত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনোয়ার হোসেনের ভাই জামশেদ উদ্দিন বলেন, আমার ভাই ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে হযরত ইয়াছিন শাহ মাজারে একটি ইফতার মাহফিলে ছিল। সেখানের ভিডিও ফুটেজ আছে। কোন ধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়াই পুলিশ আমার ভাইকে থানায় ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করে। অপর ৩ নেতার পরিবারের পক্ষ থেকেও একই কথা বলছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান বলেন, হত্যাকারীরাতো হত্যার পর লাশ ধরে কাঁদেও। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবকদল নেতারাতো আমাকে কয়েকদিন আগে মিষ্টি খাইয়ে ফটোসেশনও করেছেন। তারা কিভাবে নাছির উদ্দীনের স্ত্রী রোমানার আক্তারের করা মামলার আসামি হলেন আমার জানা নেই। যারা আপনাকে মিষ্টি খাইয়ে ফটো সেশন করল তারাই হত্যা মামলার আসামি হলেন। তদন্ত ছাড়া গ্রেফতার করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মজিবুর রহমান বিষয়টি এড়িয়ে যান।