জামায়াতের কর্মী সম্মেলন

বাংলাদেশের মাটিতে আর ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে না: রফিকুল ইসলাম খান

এফএনএস (এস.এম. শহিদুল ইসলাম; সাতক্ষীরা) : | প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম
বাংলাদেশের মাটিতে আর ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে না: রফিকুল ইসলাম খান

সাতক্ষীরায় কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে না। এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তির দাবী জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবী শুধু জামায়াতে ইসলামীর নয়, এ দাবী এখন  দেশের ১৭ কোটি মানুষের। সরকারকে উদ্দেশ্য করে মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এদেশের জনগণ। তিনি বলেন, এটিএম আজহারুলকে যারা কারাগারে আটকে রেখে ছিল তারা ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ছিল। বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কি ভারতে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেন এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে আপনারা ক্ষমতায় থাকাকার অধীকার রাখেন না। তাই অবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিন। রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি অভিশপ্ত দল। তারা ক্ষমতায় থাকতে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। লুটপাট করেছ। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। তারা অবৈধভাবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলো। তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এতো উন্নয়নের রোল মডেল হলে দেশ ছেড়ে পালালেন কেন? জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির কাষ্ঠে গেলেও কখনও দেশ ছেড়ে পালাননি। মূলত নিজেদের অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগকে পালাতে হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াত। যাকে তাকে জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করেছে।তিনি বলেন বর্তমানে একটি দল বিগত পতিত সরকারের মতো বক্তব্য দিতে শুরু করেছে। তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাকান্ড চালানো বন্ধ করেন। জুলুম, চাঁদাবাজি বন্ধ করেন। সাড়ে ১৫ বছর ঘরে বন্দী ছিলেন ঘর থেকে বের হতে পারেন নাই। বর্তমান পরিস্থিতিকে আল্লাহ তা’আলার নেয়ামত হিসেবে মনে করুন। আল্লাহ তাহলে আপনাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে দেবে, দেশবাসীও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

কোনো ষড়যন্ত্র-মিথ্যাচার করে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে আর শেষ করা যাবে না জানিয়ে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলুম ও নির্যাতন মোকাবিলা করে সঠিক ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সব সময় আমরা মহান আল্লাহর সাহায্য পেয়েছি।  জামায়াত সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এ কথা একবাক্যে স্বীকার করেন যে নিজামী সাহেবের মতো পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে আর কেউ ছিলেন না। তারপরও তাকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল জামায়াতের নেতৃত্ব শেষ করার মাধ্যমে পুরো সংগঠনকে শেষ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু না তা হয়নি, বরং জামায়াতে ইসলামী বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে আজ দাঁড়িয়ে গেছে।রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আজ বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের জাগরণ শুরু হয়েছে। আমাদের ঐক্য হবে আরও সুদৃঢ়। মনে রাখবেন ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি কোনোদিনই ভালো হয় না, এটাই মহান আল্লাহর ওয়াদা। রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, আজ সেই ট্রাইব্যুনালেই আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগ ও পাশের রাষ্ট্র এ দেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করতেই জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় দিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১ নং থেকে ১১ নং পর্যন্ত শীর্ষ নেতাদের ওপরে জুলুম চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন সাজানো সাক্ষী এনে প্রহসনের রায় দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখেছে জনগণ।  

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, গত ৫৩ বছরে যেখানে একটি সমৃদ্ধ ও সুখী রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল, সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে স্বৈরশাসন, লাঠির শাসন এবং সর্বশেষ ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র পথ পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে এ দেশের সকলে ভালো থাকবে, সুখে থাকবে।’ তিনি বলেন, দেশজুড়ে একটা আওয়াজ উঠেছে, সব দল দেখা শেষ, জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা সম্মানিত হবে। অমুসলিমরা সবচেয়ে ভালো থাকবে। ইসলামী সরকার তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেবে। জামায়াতের কাছে অমুসলিমরা সবচেয়ে নিরাপদ থাকবে।

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করেই নির্বাচন দিতে হবে। যেনতেন সংস্কার মানবো না, তবে সেই সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণ মানবো না। এ দেশের মানুষ জেগে উঠতে শিখেছে। জেগে ওঠা জনগণ কারও প্রভুত্ব মানবে না। ২৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) বিকাল ৪টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর সরকারি এইচসি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহা. ইজ্জত উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেলা আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা জামায়াতের নাবেয়ে আমীর শেখ নুরুল হুদা, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী মাহবুবুল আলম, প্রভাষক ওমর ফারুক, জেলা অফিস সেক্রেটারী রুহুল আমিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর শ্যামনগরে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ হওয়ায় নেতাকর্মীরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত। সকাল ৯টায় জামায়াতের মহিলা কমীর্ সম্মেলনেও তিনি প্রথান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পরে দুপুর আড়াইটায় সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই নেতাকর্মীদের পাদচারণায় মুখর হয় নকিপুর সরকারি এইচ.সি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে মিছিল সহকারে অংশগ্রহণ করেন নেতাকর্মীরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে