আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সড়কে ভোগান্তি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। কারণ দেশের নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অরক্ষিত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্ঘটনা ও যানজটের শঙ্কা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ সাধারণত সড়ক পথেই ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতিতে এমনিতেই দেশের বিভিন্ন সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আর এবারের ঈদ যাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার পাশাপাশি ডাকাতির আশঙ্কা আরো বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে পুলিশ বাহিনী সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন খাত এবং যাত্রীকল্যাণে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বরাবরই ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে বিপুলসংখ্যক একসঙ্গে মানুষ গ্রামে যায়। তাতে সড়ক-মহাসড়কে যাতায়াতে দেখা দেয় তীব্র গণপরিবহনের সংকট। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট লাগে। তখন দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। আর এবারের ঈদের ছুটি অন্য বারের চেয়ে বেশি হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে বেশি পরিমাণ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। তবে এবারের ঈদে ছুটি বেশি হওয়ায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে ঈদযাত্রা অনেকটাই ভোগান্তি মুক্ত করা সম্ভব হবে। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের সময় সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়ে। ওই সময় ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো রাস্তায় নামে। আর সীমিত সামর্থ্যরে লাখ লাখ শ্রমিক শেষ মুহূর্তে বেতন-বোনাস পেয়ে ওসব গাড়িতে বাড়ি ফেরে। আর ফিটনেসবিহীন ওসব যানবাহন রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে। অথচ কলকারখানা ও পোশাক শ্রমিকদের বেতন বোনাস কয়েকটা দিন আগে পরিশোধ করে ধাপে ধাপে তাদের বাড়ি পাঠানো হলে মহাসড়কের পরিস্থিতি উন্নতি হতো। তবে কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচতো প্রাণ ও ক্ষয়ক্ষতি।
সূত্র জানায়, ধারণা করা হচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে এবারের ঈদে নিজ নিজ গন্তব্যে যাবে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। তাছাড়া দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরো ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হবে। যার ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে। এমন অবস্থায় পথে পথে যাত্রী হয়রানি, সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কারণ বিগত ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়েছিলো। আর বিগত ৯ বছরে শুধু ঈদুল ফিতরে ২৩৭৭টি দুর্ঘটনায় ২৭১৪ জন নিহত এবং ৭৪২০ জন আহত হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রী, চালক, পরিবহনকর্মী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা জরুরি। ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহার, গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের কয়েকদিন আগ থেকেই বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কের টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ও মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের প্যাট্রোলিং ডিউটি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে সক্রিয় থাকতে হবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম জানান, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। আর এর দায় অন্যায়ভাবে মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক সমিতি কঠোর হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ৩৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রাপথে হাইওয়ে পুলিশের হটলাইন নম্বরে কল করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মিলবে।