আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সংস্থাটির অনেক শর্ত ‘দেশের স্বার্থবিরোধী’ হওয়ায় আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করছে না। ফলে আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড় ইতোমধ্যে কয়েক দফা পিছিয়েছে। ঋণের অর্থছাড়ে আইএমএফের প্রধান তিনটি শর্ত হচ্ছে-ডলারের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং কর আদায় বাড়ানো। আইএমএফের যেসব শর্ত বাস্তবায়ন করলে মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে এবং জনগণের ওপর চাপ বাড়বে, সেসব শর্ত বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ৬ এপ্রিল আইএমএফের একটি মিশনের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। তারা শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং আগামী দিনে শর্ত বাস্তবায়নে সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করবে। উল্লেখ্য, আইএমএফ তৎকালীন আওয়ামী সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর ঋণের বিপরীতে কঠিন শর্ত আরোপ করে। এসব শর্তে সম্মত হয়ে ২০২৩ সালে আইএমএফের সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি করে তৎকালীন সরকার। চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড় হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আইএমএফের অনেক শর্ত দেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার সেসব বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করে। বর্তমান সরকার আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন না করায় আইএমএফও ঋণের অর্থছাড়ে দেরি করছে। গত ডিসেম্বরে ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড় হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এরপর ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে তা পিছিয়ে মার্চে নেওয়া হয়। মার্চেও অর্থছাড় হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামীতে দুই কিস্তি একসঙ্গে প্রদানের কথা রয়েছে। এপ্রিলে আইএমএফ মিশন ঢাকা সফর করে গেলে জুনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিষদে বাংলাদেশ বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। তখন পর্ষদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আইএমএফের ঋণচুক্তি থেকে সরকার একেবারে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে না। এ সংস্থার ঋণ পাওয়া গেলে অন্য সংস্থাগুলোর ঋণ পাওয়া সহজ হয়। এ কারণে সরকার আইএমএফের ঋণচুক্তির মধ্যে থাকতে চাচ্ছে। বস্তুত বিগত সরকারের আমলে তীব্র ডলার সংকট নিরসনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এখন ডলার সংকট কেটে গেছে, যে কারণে সংস্থাটির ঋণ নিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না সরকার। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে শিল্প খাতে খরচ বাড়বে। পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এর প্রভাব পড়বে। কাজেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে সরকারকে জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। আইএমএফের অন্যতম শর্ত হচ্ছে কর আদায় বাড়ানো। এক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। জনগণের ওপর করের চাপ না বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।