কিশোরগঞ্জের এমন কোন পাড়া মহল্লা নেই যেখানে হাত বাড়ালে মাদক পাওয়া যাবে না। মাদকের এ ভয়াবহ বিস্তারের বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এসব নিয়ে কোথাও কোথাও সংঘাত সংঘর্ষও ঘটছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া বটতলা এলাকা ও তার আশপাশে কতিপয় মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযান চালাতে গিয়ে মাদকের শক্তিশালী সিন্ডিকেটদের সঙ্গে প্রায়শই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে অতিষ্ঠ এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাদকমক্ত নগুয়া গড়তে নগুয়া বটতলা এলাকায় এক সমাবেশের আয়োজন করে এলাকাবাসী। সমাবেশে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তারা বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরণের সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী যারাই জড়িত হবে, তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট ছাড়াও কঠোরহস্তে দমন করা হবে।
এদিকে, গত ২৭ মার্চ দুপুরে সদরের মারিয়া বিসিক শিল্পনগরী এলাকায়ও তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদ পুষ্ট একটি পরিবারের মাদক কারবারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী সোচ্চার হলে একই এলাকার মাদক কারবারি কতিপয় মাদকসেবী দা ও লাঠিসোটা নিয়ে এলাকার মানুষকে দাওয়া করে। একপর্যায়ে এলাকাবাসী একজোট হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়িতে উভয় পক্ষের বেশ কজন আহত হয়। তাদের মধ্যে বেশ কজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও গণধোলাইয়ের শিকার মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা, মাদক কারবারি হাবিবুর রহমান হাইবুল আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই হাইবুলের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একাধিক মামলা।
এর আগে কিশোরগঞ্জ শহরের গাইটাল জনতা স্কুল এলাকাতেও গত ১২ মার্চ মাদক কারবারের অভিযোগে শাহ্ আলম নামের একজনের বাড়িতে এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। মাদক কারবারীদের ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে হাফিজ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে অবশ্য শাহ আলম সহ তার পিতা-মাতা ও ছোট দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে মৃতের ছেলে।
তাঁরও আগে সদরের লতিবাবাদ ইউনিয়নের কাঁটাবাড়িয়া এলাকায় মাদকের বিস্তার রোধে প্রথমে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে নামে এলাকাবাসী। পরে এলাকার যুবসমাজের উদ্যোগে কমিটি করে পর্যায়ক্রমে পাহাড়ার ব্যবস্থা করে ভয়াবহ মাদকের বিস্তার প্রায় শতভাগ ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
অপরদিকে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার মাঝিরকোনা গ্রামের মাদক সম্রাট অন্তত ১০ মামলার আসামী একাধিকবার মাদকমামলায় হাজতবাস করে শরীফ মিয়া। শরীফের সহযোগী মাদকাসক্ত ফারুক ও তার সহযোগীরা মাতলামি করে এলাকার নিরীহ মানুষকে পিঠিয়ে গুরুতর আহত করে। এ নিয়ে করিমগঞ্জ থানায় ও আদালতে একাধিক মামলা হলেও আজও সে অধরা। তবে এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধ করছে।
এমনি করেই কিশোরগঞ্জের আরও অনেক এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
ওইসব এলাকাগুলোতে যেখানে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যেতো, সেখানে এখন মাদক কারবার কিংবা সেবন তো দূরের কথা, কেউ মাদকের নাম নিতে পর্যন্ত সাহস পাযবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিবাদী মানুষেরা।
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনেকেই কিংবা পরিবারের সব সদস্য দিয়ে এতো দিন নির্বিঘ্নে মাদকের কারবার করে আসলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ মাদকের বিরুদ্ধে জেগে উঠছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এভাবেই একদিন নিজেদের সন্তানদের মাদকের হাত থেকে রক্ষায় কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশের মানুষ জেগে উঠবে, এমন প্রত্যাশা মাদকবিরোধী আন্দোলনকারীদের। তাঁরা মনে করেন, প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে যে যুব সমাজের একটি অংশের বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ, সেই যুবসমাজের অপর একটি অংশই সর্বনাশা মাদকের ভয়াল থাবা থেকে নেশায় আসক্ত যুব সমাজকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে।