ঘুষ কেলেঙ্কারী: অবরুদ্ধ সাবরেজিষ্টার’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ

এফএনএস (শাহ্ জামাল; ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া) : : | প্রকাশ: ১৬ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
ঘুষ কেলেঙ্কারী: অবরুদ্ধ সাবরেজিষ্টার’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ঘুষ কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত অবরুদ্ধ সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকার’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছে উদ্ধার অভিযানে থাকা ভেড়ামারা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ১ম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট আনোয়ার হোসাইন। তবে ডির্পাটমেন্টাল বা প্রশাসনিক ভাবে আলোচিত দূর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা না হওয়ায় বিধি মোতাবেক কোন ব্যবস্থায় গ্রহন করা হয় নি বলে জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া জেলা রেজিষ্টার গাজী মুহাম্মদ আব্দুল করিম।

দীর্ঘদিন ধরেই ভেড়ামারা সাব রেজিষ্ট্রারের গুরুত্বপূর্ন পদটি শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে চলছে এই অফিসটি। দৌলতপুর উপজেলার সাব রেজিষ্টার বোরহান উদ্দিন সরকার কে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ভেড়ামারায় চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। সপ্তাহের ১দিন প্রতি ব্রহস্প্রতিবার তার ভেড়ামারায় দায়িত্ব পালন করা কথা।  গত বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর প্রথম কর্মদিবস।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে ভেড়ামারা অফিসে যোগ দিয়েই তিনি তার কৌশলী কার্যক্রম শুরু করেন। ভুল ধরতে থাকেন একের পর এক দলিলে। কিছু দলিল সম্পাদন করলেও ক্রুটিপূর্ন অনেক দলিল রেখে দেন সন্ধ্যার পর কাজ করার জন্য। এমন খবর চাওড় হলে, বিকাল থেকেই সাব রেজিষ্ট্রার চত্বরে জড়ো হতে থাকে ছাত্র-জনতা এবং ভুক্তভোগীরা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা সাব রেজিষ্ট্রারের কার্য্যালয়ে প্রবেশ করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় তাঁরা সাবরেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত সহকারীকে খুঁজতে থাকেন। ওই সহকারীর মাধ্যমেই তিনি দলিলে ভুলত্রুটি সংশোধন করে রেজিস্ট্রি করার ওয়াদা করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ওই  দিনেই তিনি প্রায় ৮০ টি দলিল সম্পাদন করেন। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ১ম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট আনোয়ার হোসাইন ও ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহীদুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে গিয়ে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিন সরকারকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে।

বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযোগ করেন, সাবরেজিস্ট্রারের কাজ সাধারণত বেলা তিনটা পর্যন্ত। কিন্তু তিনি ত্রুটিপূর্ণ কিছু দলিল রেখে দিয়েছেন ইফতারির পর কাজ করার জন্য। যে দলিলগুলো রেজিস্ট্রি করেছেন, সেখানেও নামের ভুল বাবদ তাঁর সহকারীকে দিয়ে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন। ভেড়ামারার দলিল লেখক সমিতির সদস্য মঞ্জুর রাসেল ডলার জানিয়েছেন, বৃহস্প্রতিবার প্রায় ৮০টি দলিল সম্পাদন করেছেন ওই সাবরেজিষ্ট্রার। 

ভেড়ামারার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভেড়ামারা উপজেলার পরানখালি এলাকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন তাঁদের জানিয়েছেন, তাঁর এক স্বজনের দলিলে নাম ভুলের কারণে সাবরেজিস্ট্রার বোরহান উদ্দিনের সহকারী ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এুসংক্রান্ত মুঠোফোনে কল রেকর্ড আছে। এরকম অনেক দলিল করে কয়েক লক্ষ টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। আমরা ছাত্র জনতা আসার আগেই তার সেই সহকারী কে সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।

ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ১ম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট আনোয়ার হোসাইন বলেন, ঘুষ কেলেঙ্কারীর অভিযোগ এনে ছাত্র-জনতা ও ভুক্তভুগীরা সাবরেজিষ্ট্রার কে তার কার্য্যালয়েই অবরুদ্ধ করে রাখার সংবাদ পাওয়ার পর তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, ঘুষ কেলেঙ্কারীর অভিযোগ গুলো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধাতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। 

এ দিকে কুষ্টিয়া জেলা রেজিষ্টার গাজী মুহাম্মদ আব্দুল করিম জানিয়েছেন, ঘুষ কেলেঙ্কারীর অভিযোগে অবরুদ্ধ সাবরেজিষ্টার বোরহান উদ্দীন সরকারকে অবরুদ্ধ করে রাখার মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু ডির্পাটমেন্টাল বা প্রশাসনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এখনো কেউ দেয় নি। তাই তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কোন ব্যবস্থায় গ্রহন করা হয় নি।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে