উত্তর জনপদের বিখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চতরা হাট। যেখানে পীরগঞ্জ উপজেলাসহ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, ওসমানপুর এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার জনসাধারনের অবাধ বিচরণ। হাটের নামে প্রায় ৯ একর ৮০শতক জমি থাকা সত্বেও হাটটিতে জায়গা সংকটে পরিনত হয়েছে। যে কারনে অলি গলিতে কেনা বেচা করতে বাধ্য হচ্ছেন হাটুরেগন। অবৈধ দখলদারীদের হাত থেকে হাট বাঁচাতে উচ্ছেদ অভিযান এখন জরুরী। এখানে বেপরোয়া ভাবে হাটের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। যে কারনে মালিকানা জমি লিজ সহ হাটের চতুরদিকের সরকারি সড়কের উপর নিয়মিতভাবে হাট বসানো হচ্ছে। সড়কে হাট বসানোর ফলে তীব্র যানজটে নাকাল হাটুড়ী ও সাধারণ পথচারী। সিএস রেকর্ডে রাজা সূর্য কুমার গুহ রায়ের ছেলে সৌরিন্দ্র মোহন গুহ রায়ের জমিদারি পরগনা কাবিলপুরের বিভিন্ন দাগে ২২.০১ একরের মধ্য জেএলনং-১৭৯, খতিয়ান নং-০১, মৌজা ইকলিমপুরে ৯.৮০ একরে চতরা হাট গড়ে উঠে। যা পরবর্তিতে পূর্ব পাকিস্থান প্রদেশ পক্ষে কালেক্টর রংপুর নামে এসএ রেকর্ড চুড়ান্তভাবে সম্পাদিত, প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। নব্বই দশকের পর থেকে এক শ্রেণীর স্বার্থান্ধ ব্যক্তি হাটের জায়গা দখল করে ঘর-বাড়ি, দোকান পাট নির্মাণ করে হাটের ৯.৮০ একর জমি সঙ্কুচিত করতে থাকে। বর্তমানে হাটের ৭ একর জমিই অবৈধ দখলদারদের কবলে। অবশিষ্ট মাত্র ২ একর ৮০ শতক জায়গায় চলছে হাটের কার্যক্রম।
চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন জানান, পাঁকা বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করে দখলকৃত হাটের জমি পুণরুদ্ধারে ২০০৭, ২০০৮ সালে এসিল্যান্ড সাজ্জাদ হোসেন ভুইয়া অভিযান চালিয়ে অধিকাংশ জমি পুণরুদ্ধার করে। পরবর্তিতে উদ্ধারকৃত জমি আবারও দখল শুরু হয়। ২০২১ সালে এসিল্যান্ড সঞ্জয় কুমার অভিযান শুরু করলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। রাজনৈতিক গ্যাড়াকলে মজবুত অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় হাটের জমি আজও উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। বরং সুযোগ পেলেই কেউ না কেউ জমি দখলে নিচ্ছে। বর্তমানে হাটের ৬টি সেডও অনেকের দখলে। হাটের জমি ব্যক্তি মালিকানার দাবির ফলে হাটে ড্রেনেজ সুবিধাও ব্যাহত।
চতরা ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩ সালের ২৮ আগষ্ট দাখিলকৃত প্রতিবেদনে আইয়ুব আলী,নূর আলম,নওয়াব আলী,আব্দুস সামাদ, আব্দুল গফুর,সোলেমান, মজিবর রহমান,জাকারিয়া আহম্মেদ,আল এমরান, মর্জিনা বেগম, খোকা মেম্বার হাটের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। এছাড়াও সেলিম মিয়া, খালেক মন্ডল, ছালেক মন্ডল, সুমন, আলম, বিকাশ চন্দ্র, লুৎফর,ইব্রাহিমসহ ৩০৮ জন আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দোকান,আড়ৎ, অফিস বসিয়ে হাটের জায়গা দখলে রেখেছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রতিবেদনে দখলদারদের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গা প্রায়ই দখল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি হাটের অন্তর্ভুক্ত নদী শ্রেণীর জমিও অবৈধ দখলে। এ অবস্থায় হাটের অস্তিত্ব টিকে রাখতে উচ্ছেদ অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে।
হাট ইজারাদার হাবিবুর রহমান হবি জানান, চতরা হাট ৯ একর ৮০ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন সীমিত জমির উপর হাট বসানো হচ্ছে। এলাকার কিছু লোকজন প্রভাব খাটিয়ে হাটের অলিগলিতে প্রায় ৩৫০টি দোকান ঘর নির্মাণ করেছে। তারা অধিকাংশ ঘরগুলো ভাড়া দিয়ে রেখেছে। এছাড়াও হাটের জমিতে সোনালী ব্যাংকসহ ৪০টি স্থানে বাসা বাড়ি নির্মান করেছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। জায়গা সংকটে ক্রয়-বিক্রয় করতে আসা সাধারণ লোকজন নানা সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে কাঁচামাল বিক্রেতাগন হাটের স্থান থেকে ৪’শ মিটার দুরে চতরা ডিগ্রী কলেজের সম্মুখে ধাপেরহাট-চতরা সড়কের দু’দিকে বেচা-কেনা করছে। এতে হাট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠা ২টি কলেজ, ৩টি হাইস্কুল, ১টি দাখিল মাদ্্রাসা, এতিমখানা ও কিন্ডার গার্টেন সহ ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। হাটের ভিতর সরকারি ভাবে নির্মিত সেড দখল নিয়েও ঘর নির্মাণ করেছে অনেকে। দখলদার হারুন অর রশিদ জানান, ব্যাংকের মূল ভবন আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, সামনের পার্কিং ৫ শতক হাটের দাগে রয়েছে। ৬২ সালে চেক মূলে মৃত নুরুন্নবী শেখ চেক মূলে হাটের জমির মালিক হয়ে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমানে মাঠ জরিপ আমাদের নামে। দখলদার নওয়াব আলী জানান, জমিদারের চেক মুলে আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমি ও আমার ভাই আইয়ুব আলী ২৫ শতক জমির উপরে বাড়ি নির্মাণ করে বহুদিন হলো বসবাস করছি। সরকার চাইলে আমাদের জায়গা করে দিক। হাটের জায়গা ছেড়ে দিবো। অপর দখলদার খোকা মেম্বার জানান, হাটের জায়গায় বাড়ি ও দোকান করে রেখেছে অনেকেই। আমি নিয়মিত হাটের ইজারাদারকে টোল দেই। যখন সরকার মার্কেট করবে কিংবা যে কোন প্রয়োজনে জায়গা ছেড়ে দিতে বলবে তখন ছাড়বো।
ইউএনও খাদিজা বেগম বরাবরের মতো বলেন, আমরা সরকারি জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। কবে তা গ্রহন করা হবে ? তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে নারাজ।