শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে লেবু চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন জুলহাস উদ্দিন নামের এক কৃষক। বর্তমানে তিনি বাগানের লেবু বিক্রি করে প্রতিবছর দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারছেন। তার এই সফলতা দেখে আশপাশের গ্রামের লোকজন লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। সফল এই লেবু চাষি জুলহাস উদ্দিনের বাড়ি উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের ৯ নং ব্লকের শিমুলতলা গ্রামে।
জানা গেছে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় বিগত ২০২০ সালের ১ জুন তার নিজস্ব এক একর জমিতে চায়না- ৩ সীডলেস জাতের ৪০০ চারা লাগিয়ে লেবু বাগান সৃজন করেন জুলহাস। বাগান স্থাপনের প্রথম আড়াই বছর ফলদ গাছে পরিণত হতে সময় লেগেছে। এরপরেই তার লেবু বাগান থেকে লেবু উৎপাদন শুরু হয়। প্রতি এক সপ্তাহ পরপর লেবু বিক্রির উপযোগী হয়। তখন তার বাগান থেকে প্রতিদিন ১ হাজার করে লেবু উত্তোলন করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। বাজারে বেশি চাহিদা থাকায় প্রতি হাজার লেবু ৮/৯ হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন তিনি। তবে বাজার দর কম থাকলে এর চেয়ে কম দামে লেবু বিক্রি করতে হয়।
চাষি জুলহাস উদ্দিন জানান, তার এক একর লেবু বাগানের জমিতে আগে তিনি ধানের আবাদ করতেন। পরে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে লেবু বাগান স্থাপন করেন। তিনি ধানের চেয়ে লেবু বাগান করে সফলতার মুখ দেখছেন। ধানের চেয়ে লেবুতে লাভ অনেক বেশি। তাছাড়া লেবু বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, পালং শাক ও লালশাকসহ অন্যান্য সবজি আবাদও করছেন। তার নিজের পরিশ্রম ছাড়াও কাজের লোক নিয়ে পোকা মাকড় ও আগাছা দমন, সার প্রয়োগ, সেচ ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদিত লেবু বাজারজাত করতে অনেক টাকা খরচ হয়। তারপর ও খরচ বাদে বছরে তার প্রায় দুই লাখ টাকার মতো আয় থাকে। যারা নতুন বাগান স্থাপন করতে চান তাদের কাছে চারা বিক্রি করেও অনেক টাকা আয় করছেন তিনি। এমনকি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিজের পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পারছেন।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মওদুদ আহমেদ জানান, প্রায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় ফসলের চাষ হয়েছে। এই উপজেলায় বিভিন্ন আকারের প্রায় ৪৫০টি লেবু ও মাল্টার বাগান সৃজন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চাষি জুলহাস উদ্দিনকে লেবুর বাগান তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পানির সমস্যা দূরীকরণে একটি ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম (সেচের আধুনিক প্রযুক্তি) প্রদর্শনী তার বাগানে স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি প্রতিবছর উৎপাদিত লেবু বিক্রি করে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারছেন।