সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জনপদ খুলনার কয়রায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চারিদিকে নদীবেষ্টিত কয়রার ৭টি ইউনিয়নের পানি লবণাক্ত হওয়ায় এখানকার বেশিরভাগ মানুষ গোসল, খাওয়া ও রান্নার কাজে পুকুরের পানির ওপর নির্ভরশীল। এ জনপদের ৩ টি ইউনিয়নে টিউবওয়েলের পানি আশানুরূপ না হওয়ায় লোকজনের পুকুরের পানি ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। চলতি বছরে এখন পর্যন— বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় বর্তমানে গরমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ৯০ শতাংশ পুকুরের পানি ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় খাবার পানিসহ গোসল ও রান্নার পানির তীব্র সংকটে ভুগছে কয়রার হাজার হাজার মানুষ। উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি ও কয়রা সদরের আংশিক এলাকায় টিউবওয়েলের পানি আশানুরূপ হলেও পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ার কারণে টিউবওয়েলগুলোয় ঠিকমতো পানি উঠছে না। অন্যদিকে এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরের পানি প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসছে। অপরদিকে নলকূপের পানি ঠিকমতো না ওঠায় পানির জন্য বর্তমানে কয়রার মানুষের মাঝে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ,ব,ম আঃ মালেক বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে জেলা পরিষদের পুকুর ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের খনন করা পুকুরের পানির ওপর হাজার হাজার মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৬নং কয়রা গ্রামের আদিবাসী সদস্য বাসন্তি মুন্ডা বলেন, সকালে ঘ্মু থেকে উঠে ৫ কিঃ মিঃ দুরে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের বতুলবাজার গ্রামের হাসান মেম্বাবের বাড়ির জলাধার থেকে খাবার পানি নিয়ে তাই খেতে হয়। এতে যাওয়া আসা অনেক সময় লেগে যায়। সংসারে কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ের চৌকুনী গ্রামের আয়শা খাতুন বলেন, গ্রামের একটি পুকুরের পানি সংগ্রহ করে পানি খেতে হয়। তারপরেও রয়েছে রান্না করার পানির সমস্যা। কয়রার অধিকাংশ মানুষের চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে পানি সংগ্রহ করে তাই খেতে হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালি, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাছারিবাড়ি, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪নং কয়রা, মহারাজপুর ইউনিয়নের কালনা, বাগালী ইউনিয়নের বামিয়া, আমাদি ইউনিয়নের হাতিয়ারডাঙ্গা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ভাগবা এলাকায় জেলা পরিষদ ও দুর্যোগব্যবস্থা অধিদপ্তরের পুকুরগুলো বসানো রয়েছে পিএসএফ। ঐ সকল পুকুর পাড়ে বসানো পিএসএফ থেকে সকাল-বিকাল লাইন দিয়ে নারী, পুরুষরা খাবার পানি সংগ্রহ করছে। দূর গ্রামের শত শত মানুষ হুড়োহুড়ি করে কলসে পানি ভরে নিয়ে যাচ্ছে। পাথরখালী গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, এখানকার টিউবওলের পানি আশানুরূপ না হওয়ায় পুকুরগুলো থেকে গ্রামের লোকজন রান্নার পানি সংগ্রহ করে থাকে। কয়রা সদরের ৫নং কয়রা গ্রাামের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন পাড় বলেন, গ্রামের পুকুরগুলোয় গোসল উপযোগি পানি না থাকায় গোসলের জন্য মসজিদের পুকুরে যেতে হয়। উত্তর বেদকাশির বড়বাড়ি গ্রামর বাসিন্দা নুরআলী সরদার বলেন, তীব্র তাপদাহে পুকুরে পানির স্তর একবারে নিচে নেমে গেছে। ফলে খাবার পানি, গোসল ও রান্নার পানির চরম সংকটে ভুগছে এলাকার মানুষ। কয়রার পানীয় জলের সংকট নিরসনে সরকারি উদ্যোগে উপজেলার সর্বত্র বড় বড় মিষ্টি পানির পুকুর খননের দাবি জানান স্থানীয়রা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইস্তিয়াক আহমেদ বলেন, সুপেয় পানির সংকট নিরসনে চলতি অর্থ বছরে ১২ শ বৃষ্টি পানি সংরক্ষণে পানির ট্যাংকি বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ শ গভীর নলকুপ বসানোর পাশাপাশি ৩ টি লবন পানি মিষ্টি করার প্লানিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরদিকে এ জনপদে খাবার পানির সমস্যা দুর করনে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস বলেন, কয়রায় সুপেয় পানির সংকট দির্ঘদিনের। এখানকার মানুষের খাবার পানি উৎস যোগাতে সরকারি ভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাংকি বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়া যে এলাকায় নলকুপের পানি সফল সেই এলাকায় গভীর নলকুপ বসানোর মধ্য দিয়ে পানির নিরশনে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।