চট্টগ্রামের শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের মেয়ের জামাই বেলালের মালিকানাধীন ইউনিটেক্সের ১ হাজার ৫৮৬ শতক সম্পত্তি নিলামে তুলেছে ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস লিমিটেডের ২ হাজার ২৩ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির কারণে ব্যাংকটির ওআর নিজাম রোড শাখা এ নিলামের উদ্যোগ নেয়।
অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর ৩৩(২) ধারায় দেওয়া ওই নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২৩ এপ্রিলের মধ্যে আগ্রহী দরদাতাদের দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। ইউনিটেক্সের নামে বন্ধক রাখা ১ হাজার ৫৮৬ শতক সম্পত্তি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে ইউনিটেক্স এলপি গ্যাসের নামে এই ঋণ নেয় ইউনিটেক্স গ্রুপ। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ এবং পরিচালক (সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বেলাল আহমদ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ বেলালের চাচা।
ইসলামী ব্যাংকের ওআর নিজাম রোড শাখার ম্যানেজার (অপারেশন) কুতুব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে এই টাকার সুদাসলে ইউনিটেক্সের কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৩ টাকা। বারবার চেষ্টার পরও ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ইউনিটেক্স গ্যাস কারখানার সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে এলপি গ্যাস ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেয় ইউনিটেক্স গ্রুপ। গ্রুপটির বাজারজাত করা এলপি গ্যাসের নাম ‘ইউনিগ্যাস’।
চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় কোম্পানিটির দুটি এলপি গ্যাসের প্ল্যান্ট রয়েছে। এই দুটি প্ল্যান্টের সর্বোচ্চ সক্ষমতা ৫ হাজার ১৫০ টন। প্ল্যান্ট দুটি নির্মাণসহ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল মিলে সর্বোচ্চ ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন। কিন্তু কোম্পানিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকটির একই শাখা থেকে ইউনিটেক্স কম্পোজিট স্পিনিং এবং পাহাড়তলী শাখা থেকে ইউনিটেক্স স্টিল মিল মিলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে গ্রুপটি।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ইউনিটেক্স চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্পগ্রুপ। ১৯৮০ সালে ব্যবসা শুরু করে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ারা উপজেলার পরৈকাড়া ইউনিয়নের ভিংরোল গ্রামের মো. হানিফ চৌধুরী। পরবর্তীকালে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, স্পিনিং গ্যাস, সিনথেটিক ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় ইউনিটেক্স গ্রুপ। ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে ও তাদের স্বজনেরা মিলে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই বের করে নিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে এস আলম পরিবার এবং তাঁর স্বজনেরা গা ঢাকা দিয়েছেন। ব্যাংকের সব ঋণ ইতিমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ঋণ ফেরত না পেয়ে ইতিমধ্যে গ্রুপটির দুই প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ধক থাকা ৪ হাজার ৭৯০ শতক সম্পত্তি নিলামে তুলেছে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা।