আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম।শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা অনেকটা ভেঙে পড়ে। সেখান থেকে অন্তর্বতী সরকার গঠনের পর আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।চাঁদপুরেও ওই সময়ে থাকা পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়। পরে নবযোগদানকৃত পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম,চাঁদপুরে কার্যক্রম শুরু করে পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালান।সেই সুবাদে
‘গত তিন-চার মাসের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। বর্তমান পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ এখন প্রধানত কাজ করছে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে। সে জন্য চিহ্নিত ডাকাতি, ছিনতাই স্পটগুলোতে টহল-নজরদারি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ নানা অপরাধ দমনে কাজ করছে।’ ইতোমধ্যে তিনি নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে চাঁদপুরের আইন শৃঙ্খলা উন্নতি করতে অনন্য ভূমিকা পালন করছেন বর্তমান জেলা পুলিশ ।
এদিকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত ছাত্র-জনতার একটি স্বৈরাচারী সরকারবিরোধী আন্দোলন যেখানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পরপরই কোটা সংস্কার আন্দোলন হিসেবে এর সূচনা হয় এবং ৫ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তি হয়। গঠিত হয় অন্তর্বতীকালীন সরকার।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর থেকেই পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পরে। আর এ সুযোগে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ডাকাতির ঘটনা, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। সরকার পতনের পর থেকেই দেশের সার্বিক অবস্থা ঠিক রাখতে বিভিন্ন দপ্তরগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে বড়ধরণের রদবদল শুরু হয়। সেই সাথে চাঁদপুরের পুলিশ প্রশাসনেও রদবদল হয়। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা যখন অবনতি ঠিক তখন চাঁদপুরে ২৪তম পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম।
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলাতেও ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মধ্যে অন্যতম মাথা ব্যাথার হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিশোর গ্যাং। জেলা শহর জুড়ে কিশোর গ্যাং এর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঝরতো রক্তের বন্যা। এসময় পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিববের সুদৃঢ় বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এবং সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয় কিশোর গ্যাং দমনের নানা ব্যবস্থা। এসপির তীক্ষ্ন বুদ্ধিমত্তার কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যে কিশোর গ্যাং দমনে দারুন সফলতা অর্জন করেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত মাত্র তিনমাসের মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ৭১ জন কিশোর গ্যাং এর সদস্য এবং ৩২ জন ডাকাত গ্রেফতার করেছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ। কিশোর গ্যাং দমন বিষয়ে সাথে কথা হয় পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিবের সাথে। জানতে চাওয়া হয় কিশোর গ্যাং দমন করতে কী পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।
তিনি জানান, আমি চাঁদপুরে আসার পর কিছুদিনের মধ্যে এ ব্যাপার পর্যালোচনা করি। অল্পসময় পর্যালোচনা করে নিজের বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভার আয়োজন করি। সেখানে আমার অফিসারদের বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনার পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দেই কিশোর গ্যাং দমনে বিশেষ উপহারের কথা। বিভিন্ন নির্দেশনা ও উপহারের কথা মাথায় রেখে আমার চৌকস বাহিনী কিশোর গ্যাং দমনে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
তিনি আরো জানান, আমরা অনেকের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি কিশোর গ্যাং এর আনাগোনার কথা। এ ব্যাপারে আমরা স্পেশাল ড্রাইভ দিয়ে বেশ কিছু কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হয়েছি। গত ৩ মাসে আমরা ৭১ জন কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ প্রশাসনসহ যৌথবাহিনীও কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল চালানোরও একটা প্রবনতা দেখা দিয়েছিলো, সে ব্যাপারেরও আমরা বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যারফলে আমরা সফলতাও লাভ করেছি। কিশোর গ্যাং ও উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল চালানো আমরা একটা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নিয়ে আসছি।
এছাড়াও বিধ্বস্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা প্রসঙ্গে এসপি জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যে জেলা পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপন প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে গণমাধ্যমকে পুলিশ সুপার বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চাঁদপুরবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষের ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে চাঁদপুরে প্রবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের নিরাপত্তার জন্যেও চাঁদপুর জেলা পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদের সময় কেউ যদি নিজের জান মাল সুরক্ষার কথা নিরাপদ না ভাবে, সেক্ষেত্রে আমাদেরকে জানালে আমরা সেইজনের জন্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাদেরকে গন্তব্যস্থলে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে দেয়ারও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অনেকে এসময় মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা পয়সা বহন করে থাকেন, সেসময় যদি কেউ নিরাপত্তাহীনতায় থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ টিম স্পট দিয়ে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিবে।
যানজট প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ঈদের সময় যানজট নিয়ন্ত্রনে ট্রাফিক জোরদার করা হয়েছে। যানজট নিরসনে আমরা জনবল বাড়ানোরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।