রংপুরে আওয়ামীলীগ নেত্রী লিপি খানের জামিন না মঞ্জুর

রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেস্টা মামলায় গ্রেফতার সংরক্ষিত আসনে আওয়ামীলীগের এমপি মনোনয়ন  ফরম উত্তোলনকারী  সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লিপিখান ভরসাকে জাল দলিলে জমি আত্মসাত চেস্টা মামলায় শ্যোন এ্যরেস্টের আদেশ দিয়েছে আদালত।  

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালত-১ এর বিচারক সোয়েবুর রহমান এই আদেশ দেন। এর আগে তাকে কড়া পুলিশী পাহারায় আদালতে তোলা হয়।

 রংপুর মেট্রোপলিন আদালতের ইন্সপেক্টর  জানান, আদালতে লিপিখান ভরসার বিরুদ্ধে থাকা শশুড় প্রয়াত সাবেক এমপি করিম উদ্দিন ভরসার নাম ব্যবহার করে রংপুর সদর সাবরেজিষ্টারের সাথে যোগসাজে অছিয়ত দলিল সম্পাদনের বিষয়ে শরিফুল ইসলাম ভরসার নামের এক একটি মামলায় ( নং-২৮ তাং-১৪/১২/২২) শ্যোন এরেস্টের আবেদন করেন বাদি পক্ষের আইনজীবি আফতাব উদ্দিন, এ্যডভোকেট মাজহারুল ইসলাম। ওই মামলাতে তিনি ১ নম্বর আসামী। আদালত উভয় পক্ষের শুনানী শেষে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখানোর আদেশ দেন। জামিন শুনানীর জন্য ২৭ মার্চ দিন ধার্য করেন।

শুনানীতে অংশ নেয়া বাদি পক্ষে এ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম জানান,রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছার প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন ভরসা অসুস্থ্য ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার সুযোগ নিয়ে জাল ও  ভূয়া অছিয়ত নামা দলিল করে জমি আত্মসাৎ করে দখল নেয়ার ঘটনায় লিপি খান ভরসা ও তার স্বামী সাইফুল উদ্দিন ভরসা, রংপুর সদর সাবরেজিষ্টার রামজীবন কুন্ড, দলিল লেখক মনিরুল ইসলাম এবং পলাশসহ ৬ জনের নামে ২০২২ সালে মামলা করেন শফিকুল ইসলাম ভরসা।

এ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময়  করিম উদ্দিন ভরসা বার্ধক্যজনিত কারনে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন এবং সম্পুর্ণরুপে মানসিক শক্তি লোপ পায় তার। ওই অবস্থাতেই কোভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ২৬-০৬-২২ তারিখে ঢাকার এভার কেয়ার হসপিটালে ভর্তি হন। ০৮-০৭-২২ তারিখে  লিপি খান  ও সাইফুল উদ্দিন ভরসা জোরপূর্বক ছাড়পত্র নিয়ে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখেন। গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পরলে পূণরায় ১৪-০৭-২২ তারিখে এভার কেয়ার হসপিটালে ভর্তি করান এবং ২৩-০৭-২২ তারিখে কোভিডে আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এরই মধ্যে লিপি খান তার স্বামী সাইফুল উদ্দিন ভরসাকে সনাক্তকারী বানিয়ে অন্য আসামীদের সহযোগিতায় করিম উদ্দিন ভরসার নাম ব্যবহার করে রংপুর সদর সাবরেজিষ্টারের সাথে যোগসাজসে কাউনিয়া উপজেলার সারাই মৌজায় ২ এক সাড়ে ১২.৫ শতক ও বানুপাড়া মৌজায় ৪ একর ৮৫ দশমিক ৫জমি মোট ৬ একর ৯৮ দশমিক ৫ শতক জমি অছিয়ত নামা দলিল সম্পাদন করে নেন। এরপর সাড়ে ৮ শতক জমি ভূয়া খাজনা খারিজ করে বিক্রি করে দেন লিপি খান। এঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ব্যুরো পিবিআ ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই অছিয়ত নামা দলিলটিকে ভূয়া এবং করিম উদ্দিন ভরসার আঙ্গুলের ছাপ ও টিপ সইয়ের মিল নেই মমে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন আদালতে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের পর আদালত লিপিখানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলাটি এখনও বিচারাধীন।

বাদি পক্ষের আইনজীবি মাজহারুল আরও বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আহত রংপুর মহানগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুনের করা হত্যা চেস্টা মামলায় ( নং ১২- লিপি খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমরা আদালতে জমি জালিয়াতি মামলার ওয়ারেন্ট কপি দাখিল করে আবেদন করি শ্যোন এরেন্টের জন্য। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।

গত ১৬ মার্চ রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয় লিপিখান ভরসাকে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আহত বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ মামুনের করা হত্যা চেস্টা মামলার ১৭৯ নম্বর এজাহারভূক্ত আসামী। এর আগে ১৩ মার্চ লিপি খানের ম্যানেজার পলাশ হাসান বাদি হয়ে ওই মামলা থেকে লিপিখানের নাম বাদ দেয়ার জন্য আওয়ামীলীগের ব্যবসায়ী অমিত বণিক কর্তৃক উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের নামে ১০ লাখ চাঁদাদিাবির মামলা করেন। ওই মামলায় অমিত বণিককেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা শিবলীকে রংপুর েেম্রটাপলিটন পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে সদর দপ্তরে নেয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, লিপি খান ভরসা সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশির আস্থাভাজন নেত্রী ছিলেন। লিপি খান ভরসার বাড়ি পাবনা। একসময় অভিজাত হোটেলে নাচগান ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি।  তিনি সাবেক এমপি মরহুম করিম উদ্দিন ভরসার পুত্র বধু। তার বিরুদ্ধে ভরসা পরিবারের জমিজমা জাল জালিয়াতি করে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা ও ওয়ারেন্টও রয়েছে। ২০২৪ সালে সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন তিনি।