ঈদ উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে নাড়ির টানে ফিরবেন বাড়ি। আর এই কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরা মানুষদের এই সময়টা যানজটের কারনে নানা রকম ভোগান্তিতে পরতে হয় তাদের। কখনও যানজট নাকাল হতে হয় আবার কখনও ছিনতাইয়ের কবলে পরে নিঃশ্ব হতে হয় তাদের। অনেক সময় দীর্ঘ যাত্রার কারনে অসুস্থ্য হয়ে পরেন অনেক যাত্রী। ঘরে ফেরা মানুষের এসব ভোগান্তি ও সমস্যার কথা মাথায় রেখে রংপুরে পুলিশ ও র্যাব ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে। যাত্রীদের জন্য অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে এ্যাম্বুলেন্সে। যাত্রী সেবা কার্যক্রম ঈদ পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন র্যাব ও পুলিশ।
রংপুর বিভাগের একমাত্র প্রবেশদ্বার নগরীর মডার্ন মোড়ে এ অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করতে আসা ঘরে ফেরা মানুষ এবং ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে যদি কেউ সমস্যা পড়ে, তাদের সাহায্য করবে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। সেই সঙ্গে চিকিৎসা সহায়তার জন্য সেবাদানের জন্য দুটি সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। র্যাবের সেবা কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যাব সার্পোট সেন্টার’ এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের সেবা কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাব কন্ট্রোল রুম’। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এ সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। সেবা কেন্দ্রে পানিসহ অন্যান্য সহায়তা সামগ্রী থাকবে। বুধবার (২৬ মার্চ) বিকেলে নগরীর মডার্ণ মোড় এলাকায় এই সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে রংপুরে র্যাব-১৩ এর কমান্ডার এম জেড এম, ইস্তেখাব চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাই ঈদের পুরো সপ্তাহ জুড়ে ঢাকাসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে যারা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যারা উত্তরাঞ্চলে আসবেন, তারা যেন কোনধরণের হয়রানি ও টিকিট কালোবাজারির খপ্পরে যাতে না পরেন। কোন ধরনের ভোগান্তিতে না পরেন সেই লক্ষ নিয়েই এই উদ্যোগ। পুলিশ র্যাব মিলেই এই যাত্রীসেবা দিতে চাই। যারা ঈদ করতে বাড়ি আসছেন এবং ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরবেন, আমরা তাদের এই যাত্রাটা নির্বিঘ্ন করতে চাই। এসময় তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।
সেবাকেন্দ্র উদ্বোধন করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ মজিদ আলী বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষেরা অনেকসময় পথে বিপদগ্রস্ত হয়। তাদের সাহায্য করার মতো কেউ থাকে না। ঈদ উদযাপনে আসা যাওয়ার সময় কেউ সমস্যা পরলে তাৎক্ষনিকভাবে তাদের সাহায্য করার জন্য র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। তাছাড়া চিকিৎসা সহায়তার জন্য সেবাদানের জন্য দুটি সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা এ সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে।
রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি যাতে না হয় সেজন্য সকলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যানজট সৃষ্টি করার চেষ্টা করে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি রোধকল্পে মালিকপক্ষকে, পুলিশ, র্যাব ও ট্রাফিক পুলিশকে সার্বিক সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। সেই সাথে মলম, অজ্ঞানপার্টি ও চাঁদাবাজির দৌরাত্ব যাতে না বাড়ে সেদিকে সকলকে সতর্ক ও সার্বিক সহযোগিতা করার আহ্বান করেন।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে রংপুর নগরীতে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাসাধারণদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মার্কেটগুলোর সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সাথে সাদা পোশাকে নজরদারী বৃদ্ধি করেছে। নগরীর অলি-গলি পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। কখনও কখনও সেনাবাহিনীকে নগর প্রধান প্রধান মোড়গুলোতে নজরদারী করতে দেখা গেছে।
এছাড়াও নগরীর মুল সড়কে যানজট কমাতে এবং কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাসাধারণের ভোগান্তি কমাতে নতুন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চালু করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে রিকশা ও অটোরিকশাকে অন্য পথে ঘুরিয়ে চলাচল করানো হচ্ছে। বিশেষ করে রংপুর নগরীর লক্ষ্ণী সিনেমা হল মোড়, জীবন বীমা মোড়, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোড়, সেন্ট্রাল রোডের কাস্টমস অফিস সংলগ্ন এলাকায় অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নতুন ট্রাফিক ব্যবস্থায় মূল নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে অটোরিকশার চলাচল সীমিত হওয়ায় যানজট কমেছে। এতে ঈদে কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছে বলে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নগরবাসী।
এ সময় বক্তব্য রাখেন রংপুর র্র্যাব ১৩’র মেজর মেহেদী, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি আব্দুর রশিদ ডিসি হেড কোয়াটার মোঃ হাবিবুর রহমান, রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শরিফুল আলম হিরু, সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন
এডিসি ট্রাফিক লিমন রায়, ডিসি ডিবি রুহুল আমিন, ডিসি ক্রাইম আবু সালেহ মো: আশরাফুল আলম
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের টিআই মোঃ রাশেদুল ইসলাম ,টিআই মোঃ কেরামত, সহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।