৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস

এফএনএস (শাকিল আহমেদ শাহরিয়ার; শেরপুর) : : | প্রকাশ: ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:৫৫ এএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর অঞ্চলকে শত্র“মুক্ত করেন । এদিন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে এক সম্বর্ধনা সভায় শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা দেন। এ সর্ম্বধনা সভায় মুক্ত শেরপুরে প্রথম বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়।  স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩০-৪০ টি খন্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এসব যুদ্ধে বিরত্ত্বের সঙ্গে লড়াই করে ৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাক হানাদারদের নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৩৯ জন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ৪১ জনসহ মুক্তিকামী বহু মানুষ শহীদ হন। ১৯৭১ এর ২৬ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী শেরপুর শহরে প্রবেশ করে বিভিন্নস্থানে গড়ে তুলেন ঘাটি। শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্নস্থানে গড়ে তোলা ঘাটিতে  চলে তাদের  নারকীয় হত্যাযজ্ঞ । এসব ঘাটিতে রাজাকার, আলবদর আর দালালদের যোগসাজসে হানাদাররা চালাতে থাকে নরহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের নৃশংস ঘটনা। অন্যদিকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা আঘাত হানতে থাকেন শত্র“ শিবিরে। শেরপুর মুক্ত হওয়ার আগে পাক হানাদারদের সঙ্গে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল এমন উল্লে¬খযোগ্য কয়েকটি স্থান হলো শেরপুর কাটাখালি ধ্বংসের পরে রাঙামাটি গ্রাম, সূর্যদী, নালিতাবাড়ী, ফরেষ্ট ক্যাম্প, তন্তর, বারোমারী, নন্নী, ঝিনাইগাতী, নাচনমহুরী, নকশী, শ্রীবরদী, কর্ণঝোরা, কামালপুর, টিকারকান্দা, নারায়নখোলা, বড়ইতার, নকলা উল্লে¬খযোগ্য। মূলত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই এ জেলায় শত্র“ সেনাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে। মূলত ১১ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারাই ঢাকায় প্রথম প্রবেশ করেন। ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তাহের বেশ ক’বার কামালপুর দুর্গে আক্রমণ চালান। কিন্তু শক্ত ঘাটি হওয়ায় পাক সেনাকে টলাতে পারেন নি। অবশেষে চূড়ান্ত যুদ্ধের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ১৮ নভেম্বর। পরিকল্পনা অনুসারে ২ নভেম্বর রাতে অবরোধের মাধ্যমে চূড়ান্ত আঘাত হানা হয় কামালপুর ঘাটিতে। ১১ দিন অবরোধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এ ঘাটির পতন হয়। মোট ২২০ জন পাক সেনা এবং বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার সদস্য বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেন। কামালপুর মুক্ত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীর সহায়তায় শেরপুরে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। কামালপুর দুর্গ দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাক বাহিনীর সকল ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর কামালপুরের ১১ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের মূহুমূহু আক্রমান ও গুলি বর্ষনের মুখে স্থানীয় পাকসেনারা পিছু হটেন। ৩ ডিসেম্বর শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী সীমান্ত ঘাটিতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা তাদের ঘাটিগুলোতে রাজাকার আলবদরদের রেখে দ্রুত পশ্চাৎপসরণ করে জামালপুরের দিকে। তাই অনেকটা বিনে বাধায় ঝিনাইগাতী উপজেলা ৪ ডিসেম্বর এবং শ্রীবরদী উপজেলা ৬ ডিসেম্বর শত্র“ মুক্ত হয়। নালিতাবাড়ীতে টানা দু’দিন যুদ্ধের পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে নালিতাবাড়ী ও শেরপুরে প্রবেশ করেন। আর ৮ ডিসেম্বর প্রবেশ করেন নকলায়। ৫ ডিসেম্বর থেকে পাকসেনারা তল্পিতল্পা বেঁধে কামালপুর-বকশীগঞ্জ থেকে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা হয়ে শেরপুর শহর দিয়ে জামালপুর অভিমুখে রওনা হন। অবশেষে পাকসেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আধারে  ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এরপর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।  মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলায় একজন বীর বিক্রম ও দুজন বীর প্রতিক খেতাব পেয়েছেন। এরা হলেন শহীদ মু’তাসিম বিল্লাহ খুররম (বীর বিক্রম), কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী (বীর প্রতিক ) ও ডা. মাহমুদুর রহমান (বীর প্রতিক)। জাতীয়ভাবে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়  দিবস উদযাপিত হলেও এদিনটি শেরপুর জেলা বাসীর জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে