কালীগঞ্জের গাছিরা নলেন গুড় তৈরিতে ব্যস্ত

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : : | প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩৪ এএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
কালীগঞ্জের গাছিরা নলেন গুড় তৈরিতে ব্যস্ত

শীতের শুরুতে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গাছিরা এখন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন গ্রামে গাছ তোলার কাজ শেষ হয়েছে। নলেন গুড় ও পাটালি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আগাম গুড় ও পাটালিতে দাম ভালো পাওয়া যায় বলে এলাকায় পাটালি গুড় তৈরির ধুম পড়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রচুর সংখ্যক খেজুর গাছ লক্ষণীয়। এসব এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যায়। বর্তমানে এসব এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবেও খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন অনেকে। শীতের সাথে খেজুর রসের রয়েছে এক অপূর্ব যোগাযোগ। শীত যত বাড়তে থাকে খেঁজুর রসের মিষ্টতা তত বাড়ে। এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতিক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হয় পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যায়। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজানো পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারেরতো জুড়িই নেই। গাছি হায়দার আলী জানান, তার প্রায় দেড়শ খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় ও পাটালি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে এসব গুড় পাটালি কিনে নিয়ে যায়। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। গত বছর তিনি ১০ কেজি ওজনের এক কলস গুড় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এবছরও ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।  চলতি বছর আরও বেশি দামে গুড় বিক্রির আশা করছেন চাষিরা। ওলিয়ার রহমান জানান, গত বছর ১০ কেজি ওজনের এক কলস গুড় উৎপাদন করতে খরচ হয়েছিল ৫০০ টাকা। আর বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকায়। তিনি জানান, জ¦ালানিসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবছর লাভের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবে দাম ভালো পাওয়া গেলে তা পুষিয়েও যাবে।  শীতে গ্রাম বাংলার জনজীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের রস। খেজুর রসের মাটির ঘটিতেই যেন আসে শীতের আগমনী বার্তা। শীত এখনো না নামলেও শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ পরিচর্যার কাজ। গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এ কাজে। আগামী ৪ মাস চলবে রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ। মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহ হবে সুমিষ্ট, স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ রস। তাতে তৈরি হবে নলেন গুড় ও পাটালী। এখান থেকে যে রস উৎপাদন হয় তার ৩০ ভাগ রস খাওয়া হয় আর বাকি ৭০ ভাগ রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এ বছর শীত একটু দেরীতে আসার ফলে গাছিরা যেন আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার গাছিরা ভোরের সূর্য্যরে আলোর সাথে সাথে দা, ঠুঙ্গি, দড়া, বালিধরা, বালু ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শীত পড়ার সাথে সাথে খেজুরগাছ তোলার দা’এর দাম বেড়ে যায়। লৌহ স্পাত মিস্ত্রিত একটি দা’এর মূল্য কমপক্ষে ১৮’শত টাকা। এছাড়া পূরাতন গাছিদা গুলোও মেরামত করতে দেখা যাচ্ছে। কর্মকাররা দিনরাত পরিশ্রম করছে। শীতের সাথে সাথে রসের হাঁড়ী তৈরী করতে পালেরা আগে ভাগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। শীত আসার একমাস পূর্বেই আমাদের মাটি সংগ্রহ করে থাকে। এ সময় তাদের রসের হাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ জন্য তৈরী করে থাকি। এ বছর দ্রব্য মূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভাড়ের মূল্য আগের বছরের তুলানায় একটু বেশিই হবে। এ অঞ্চল প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। কালক্রমে সেসব আজ শুধু স্মৃতিতেই আমরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে খেজুর গাছ আবার রোপণ করা হচ্ছে। এখানকার খেজুর গাছের রসের স্বাদ ও চাহিদা অত্যন্ত বেশি।খেজুর রসের ভিজাপিঠা, তাঁতরস, পায়েস, পাটালী যেন শীতকালে আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তাছাড়া খেজুরের কাচাঁ রসের স্বাদ জিহ্বায় না পড়লে যেন শীতের সকালটাই মিষ্টি হয় না। এই অঞ্চলে চাহিদা মিটিয়ে গাছিরা বাইরেও খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়ে থাকে। শীতের সময় এলেই গাছিরা খজুরের গাছ তোলার জন্য দা, ঠুঙ্গি, দড়িসহ গাছ তোলার সকল উপকরণ আগে ভাগেই গাছিরা সংগ্রহ করে থাকে। শীত মৌসুমে কামারেরা গাছিদের দা তৈরি করতে তারাও ব্যস্ত সময় পার করে থাকে। শীতকালে গাছিদের খেজুরের গাছ তুলতে হয়। কারণ শীত মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে হয়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW