আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের শালখালী টু বসুখালী রাস্তায় এইচবিবি কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার মানুষ অনিয়ম রোধ করে সিডিউল মোতাবেক কাজ করাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ২৪৪০ মিটার সড়কটি বছরের পর বছর ধরে চরম অবহেলায় ছিল। এলাকার মানুষ রাস্তা ব্যবহারে অসীম ভোগান্তি পেয়ে এসেছে। দীর্ঘকাল পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় সরকারি ভাবে কাজটির জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ৯ফুট আড়ের রাস্তাটি কাজ উদ্বোধন করেন ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ আবু বক্কর সিদ্দিক। ৫ ইঞ্চি বালি দিয়ে বেড তৈরির নিয়ম আছে। কিন্তু বেডে বালি বাইরে থেকে না এনে স্থানীয় লবণাক্ত পানির খাল থেকে মাটিবালি কেটে বেডে ব্যবহার করা হয়েছে। সবস্থানে বালির ব্যবহার ৫ ইঞ্চি করা হয়নি। লোনা মাটিযুক্ত বালির ব্যবহার করায় ঠিকাদারের খরচ সংস্থান হলেও রাস্তার বারোটা বাজানোর গোড়া পত্তন করা হয়েছে বলে স্থানীয় অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী জানান, রাস্তা উদ্বোধনের দিন আয়ান ভাটা থেকে ভাল ইট আনা হয়েছিল। পরবর্তীতে অপর একটি ভাটা থেকে গোপন চুক্তিতে খারাপ ইট এনে কাজ করান হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, সিডিউলে "ফাস্ট ক্লাস পিকেট ব্রিক্স দিয়ে কাজ করানোর কথা রয়েছে। কিন্তু কোন ফাস্ট ক্লাস পিকেট ইটের ব্যবহার রাস্তায় হচ্ছেনা। অনেক ইট হাতে ঘর্ষণ দিলে, চাপ দিলে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ইটের কালার বলে দেবে কোয়ালিটি নিম্নমানের।
প্রভাষক রখতিয়ার উদ্দীন রাস্তায় ব্যবহারের জন্য স্তুপ করে রাখা ইট গণনা করে দেখিয়ে বলেন, এখানে যে ইট রয়েছে তার ২৫% মত ১ নং। বাকী ইটের বেশীর ভাগ ২ নং ও সামান্য কিছু দেড় নম্বরের। এসব ইট রাস্তায় ব্যবহার করা উচিৎ হবেনা।
বসুখালী গ্রামের ফজর আলী বলেন, একই ভাবে বিভিন্ন স্থানে রাখা ইট দেখিয়ে বলেন, এসব ইটের বেশীর ভাগ ২ নং, কিছু রয়েছে দেড় নং, বাকীগুলো ১ নম্বর। বসুখালীর অহিদুজ্জামান বলেন, ইটের মধ্যে ২নং ইট বেশী, এসব ইট ব্যবহার করা হলে রাস্তা টিকবে না। তিনি কাজ বন্ধ করে ইট পরিবর্তন করে ১ নং ইট দিয়ে কাজ করানোর দাবী জানান।
স্থানী সচেতন মানুষ জানান, সিডিউলে লং ভেকু দ্বারা রাস্তার পাশের নির্তিষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি কেটে পাশে দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার শর্ট ভ্যেকু দ্বারা রাস্তার খুব কাছের মাটি কেটে রাস্তার পাশে ব্যবহার করেছে। এজিং এর পাশে দেড় ফুট মাটির কাজ করার কথা থাকলেও করা হয়নি। তাছাড়া কোন স্লোব রাখা হয়নি। রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু করলে বা মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করলে চাপে রাস্তা ভেঙ্গে পাশের খাদে গিয়ে পড়বে। এছাড়া মসজিদের কাছে ৩ রাস্তার মুখে পশ্চিম পাশের রাস্তার পাশে বড় গর্ত রয়েছে। সেখানে প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা বাঁধের কোন কাজ করা হয়নি। এখানে রাস্তা ভেঙ্গে পড়া সময়ের ব্যাপার বলে এলাকাবাসী আশঙ্খা করছেন।
স্থানীয় অধিবাসী ইসমাইল হোসাইন বলেন, ব্যবহৃত ইটের মধ্যে অনেকটাই ২নং ইট। রাস্তার সাইটে মাটি নেই। কিছু প্যানাসাইনের কাজ আছে, কিন্তু যেখানে নেই সেখানে প্রয়োজনমত মাটির কাজ করা হয়নি। মসজিদের সামনে পশ্চিম পাশে প্যানাসাইন বা গাইড ওয়াল এর কাজ করা প্রয়োজন। বর্ষা মৌসুমে বা যানবাহন চলাচল করলে রাস্তা সহসায় ভেঙ্গে ও দেবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া রাস্তার প্রস্থ বা চওড়ার কাজ সবস্থানে সঠিক ভাবে করা হয় নি, বেড সমতলকরণ সঠিক হয়নি। কোথাও কোথাও ৫ ফুটের কম করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। তবে তারা কাজে বাধা দিলে বর্ষার আগে কাজ হবে কিনা, কাজ বন্ধ হয়ে যাবে কিনা সে ভয়ে প্রতিবাদ জানাতে সাহস করছেনা বলে স্বীকার করেন। তবে শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ এগিয়ে নিলেও সাইটে ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কোন প্রতিনিধি বা কাজ দেখে নিতে কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি। ফলে বিনা কৈফিয়তে তারা অনিয়ম হজম করতে সক্ষম হচ্ছে বলে এলাকাকাসী জানান।
কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের পক্ষে কাজ পরিচালনাকারী আক্তারুল ইসলাম জানান, ২৪৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ ফুট চওড়া রাস্তার কাজে কোন অনিয়ম করা হচ্ছেনা। ভাটা থেকে ১ নং ইট আনা হচ্ছে, হাজারে ২/৫ টা ২নং ইট আসছে। আমরা সে ইট ব্যবহার করছিনা। লং ভ্যেকু দ্বারা মাটি না কাটার ব্যাপারে তিনি জানান, ৫ ভ্যেকু দারা কাজ করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, কাজ দেখে নিতে এলাকার মানুষকে বলা হয়েছে। ইট ২নং আসলে তা বাদ দিতে বলা হয়েছে। কাজ নিয়মমত হোক আমরা সেজন্য সকলকে দেখতে বলেছি। ঠিকাদারও অনিয়ম না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। এব্যাপারে বক্তব্য নিতে উপজেলা প্রকৌশলীর মোবাইলে রিং করা হলেও রিসিভ না হওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।