রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের দু’দিকে তাকালে দেখা যায় শুধু আলু আর আলু। উপজেলার আলু খ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত রামনাথপুর ইউনিয়নের খেজমতপুর মৌজায় শত শত একর জমিতে চাষকৃত আলু অধিকাংশ কৃষক এখন জমিতে বস্তা ভর্তি করে লোকসানে বিক্রিতেই ব্যস্ত। জমি থেকে আলুর বস্তা খালি করা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় দিন-রাত কাটছে তাদের। এই এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা ব্র্যাকের স্টিক আলু চাষ করেছেন যা বর্তমানে ৪’শ থেকে ৪’শ ১০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। লোকসান পুষিয়ে নিতে হিমাগারে আলু রাখার ইচ্ছায় হিমাগার থেকে মাত্র ৫’শ গজ দুরত্বে কয়েকদিন আগে আলু উঠিয়ে জমিতে বস্তা ভর্তি রেখে পাহাড়ায় ছিলেন বড় ঘোলার কৃষক আইয়ুব আলী, মোস্তফা মিয়া, খেজমতপুরের রাশেদুল ইসলাম ও বড় মহজিদপুরের আনিছুর রহমান। বাড়তি সময়, কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহালেও হিমাগারে আলু রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন লোকসানে জমি থেকেই আলু বিক্রি করছেন তারা। ব্র্যাকের স্টিক জাতের আলু উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে কেজি প্রতি ১৫/১৬ টাকা। এখন ১০ টাকা কেজিতে, কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা লোকসানে জমি থেকেই আলু বিক্রি করছেন তারা। খেজমতপুরের কৃষক রাশেদুল ইসলাম জানান, ৮০ হাজার টাকা বছর চুত্তিতে জমি লিজ নিয়ে আলু আবাদ করেছি। এই মওসুমে প্রধান ফসল আলুতেই লোকসান। কৃষকের লোকসান বাঁচাতে সরকারি সহায়তা চান তিনি। কৃষক মোস্তাফা মিয়া সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্র্যাকের নিম্নমান বীজে উৎপাদনে ঘাটতির অভিযোগ করেন। ৮২ বস্তা বীজ আলু নিয়ে ভেন্ডাবাড়ির রোকন, মিঠাপুকুরের ভক্তিপুরের সোহেল ৪’শ বস্তা, মাদারহাটের শাহিন সরদার ৭২ বস্তা আলু নিয়ে শয়েকপুরের শান্তনা কোল্ড স্টোরেজে এসেছেন। হিমাগারে আসার ৩৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ আলু গ্রহন করেনি, উল্টো হঠাৎ পড়ন্ত বিকেলে তাদের সম্মুখে ”আলু গ্রহন শেষ” ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে। অথচ তাদের কাছে বস্তা প্রতি ৫০ টাকার অগ্রীম বুকিং স্লিপ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আলু গ্রহন ১৪ মার্চ বন্ধ ঘোষনা করলেও হিমাগারগুলোর সামনে মহাসড়কে শত শত আলু ভর্তি শ্যালো চালিত ট্রলি, মাহিন্দ্র, ট্রাক, ভটভটির দীর্ঘ লাইন। কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড়গুণ ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে ও রোগবালাই না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে আলুর। এবার সোয়া ২ লাখ টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার শান্তনা কোল্ড স্টোরেজ, পীরগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ সাবেক তছির উদ্দিন, শাহ ইসমাইল গাজী (রহ) কোল্ড স্টোরেজ ও কৃষিকল বীজ হিমাগার নামে চারটি হিমাগার রয়েছে। এতে ৪৯ হাজার ৫’শ টন সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে উৎপাদিত বেশির ভাগ আলুই সংরক্ষণের অভাবে বাইরে থাকবে। ফলে কৃষক বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতেই দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। শুরুতে আগাম জাতের দাম কিছুটা বেশি থাকলেও এখন ৪’শ থেকে ৪১০ টাকা মণ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। রামনাথপুর ইউনিয়নের আলোচিত কৃষক মজিদপুরের স্কুল শিক্ষক রুহুল আমিন, তুলারাম মজিদপুরের মোশারফ হোসেন ও নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তারা জানায়। ১৪ মার্চ শুক্রবার থেকে কৃষিকল হিমাগারে গাড়ি সিরিয়ালে আছে। ৫দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া হিমাগারে। বাড়তি গাড়ি ভাড়া লোকসান বাড়িয়েছে বলেও জানান তারা। উপজেলা কুষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান, কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত আলু বাড়িতেই সংরক্ষণ করতে পারেন, সে জন্য সংরক্ষনের পদ্ধতি ও নিয়ম-কানুন বর্ননায় লিফলেট বিতরণ চলছে। মাঠ কর্মীরা পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপনন সহায়তায় আলু সংরক্ষণে রামনাথপুরে ৫/৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি ঘরে দুই থেকে আড়াই মণ আলু সংরক্ষণ করা যাবে। ইতিমধ্যে সারা দেশে ১’শ টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণে সরকারি উদ্যোগ গৃহিত হয়েছে।