রাজশাহী পুঠিয়ায় চলতি মাসে আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে গ্রামগঞ্জে অলিতে গলিতে মাদক কারবারিদের তৎপরতা ও অনলাইনজুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২৭ ফেরুয়ারি জিউপাড়া ইউনিয়নের সরিষাবাড়ি গাইনপাড়া কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে প্রতিবেশি মামা ধর্ষণ করা চেষ্টা করে। থানা পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করায় বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা ১ মার্চ উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেছেন। ৭ মার্চ অবৈধ পুকুর খনন করার চাঁদা দেওয়া-নেওয়াকে কেন্দ্র করে রক্তখয়ী সংঘর্ষ হয়। ১৮ মার্চ জিউপাড়া ইউপির মধুখালী গ্রামে ১৫ মাসের শিশুকে ৬০ বছরের বয়স্ক ধর্ষণের চেষ্টা করে।
একই দিনে উপজেলা বানেশ্বর ইউপির দিঘলকান্দি গ্রামে চতুর্থ শ্রেনিতে পড়া শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় মামলা নেয়নি। মামলা না নেওয়ায় ধর্ষণের চেষ্টা করা পরিবারটি উন্টা বিভিন্ন রকম ভুক্তভোগি পরিবারটিকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ২২ মার্চ শিশুটির মাকে অমানুষিকভাবে মারধর করেছে।
২০ মার্চ উপজেলার ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সেনভাগ দুপুরে প্রকাশ্য এক পথচারীকে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে জখম করে ১৫ হাজার টাকা এবং একটি দামি মোবাইল ছিনতাই করে নেয় হেলমেট বাহিনী। ২২ মার্চ মটরবাইক চুরিকে কেন্দ্র করে ঝলমলিয়া হাট এলাকার স্থানীয় দুই গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ হয়। পুঠিয়া বাজারে ১০ জন যুবক মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া খেলে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।
এদের আয় দেখে উপজেলার গ্রামঞ্চলে এবং পৌরসদরের অলিতে গলিতে অনলাইন জুয়া খেলায় যুবকরা মেতে উঠেছে। অনলাইন জুয়া খেলার নেশায় পরে যুবকরা মাদক কারবারির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। দেখা গেছে,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনোরকম তৎপরতা না থাকায়। অনলাইন গেমসের লোভনীয় ফাঁদে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। যুবকরা জুয়া খেলে নিঃস্ব এবং খেলার নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্য মাদক কেনাবেচা করার করতে বাধ্য হচ্ছে।
উপজেলার কৃষ্ণপুর দুদুরমোড় ঝলমলিয়া নিমতলা ধোপাপাড়া বানেশ্বর বিড়ালদহ পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড কাঁঠাবাড়িয়ার ঢাকাপাড়া ফায়ার স্টেশন সংলগ্ন সরদার পাড়া কাঠের আড়ৎ,বারইপাড়া খাঁপাড়াসহ গ্রামঞ্চলে এবং পৌরসদরের অলিতে গলিতে দিন/রাত জুয়া খেলা চলছে। রাজবাড়ি বাজার এলাকার মোহামিলুন ইসলাম বলেন, জুয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত চুরি ছিনতাই মাদক ব্যবসাসহ নানান ধরনের অপরাধ হচ্ছে। তারপর বর্তমানে মাদক কারবারিদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। থানা হতে আদিবাসি পাড়ার দুরত্ব মাত্র প্রায় ৬শত মিটার দুরে হবে।
এখানে দিনরাত হাজার হাজার লিটার চোলাই মদ তৈরি হচ্ছে। রাজশাহী হতে র্যাব এসে আদিবাসি পাড়ায় অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্ত থানা পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য কর্মকর্তা সেখানে চুপ হয়ে রয়েছেন। পুঠিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের খলিফা পাড়ায় ও শেখ রাসেল পার্কের পাশে কয়েকজন চিহ্নিত মাদককারবারি প্রকাশ্য প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদক কেনাবেচা করছে। এছাড়া মোল্লাপাড়া,কান্দ্রা গুচ্ছুগ্রাম, ধোপাপাড়া, ফুলবাড়ি, নামাজগ্রাম, শিবপুর বাজার, বানেশ্বর হাট এলাকা,পীরগাছা তালুকদার গুচ্ছগ্রাম, ঝলমলিয়া বাজার, বেলপুকুর থানা এলাকার ভেতরে মাদকবারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলা জুড়ে হাত বাড়ালেই ফেনসিডিল ইয়াবা ইরোইন গাঁজা চোলাই মদ পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মাদক বিক্রেতা বলছে, পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তি করে তারা মাদক কারবার করে আসছে। চুক্তি না করলে একদিনও মাদককারবার করা সম্ভব না। জেলা পুলিশের একটি গোয়েন্দা শাখার সদস্যদের সঙ্গে অপরাধ জগতের লোকদের মাসোহারা চুক্তি থাকায়। মাদক কারবারিরা বাধাহীনভাবে সবস্থানে মাদক কেনাবেচা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এরা ফ্যাসিষ্ট সরকার পতন হওয়ার পর হতে নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত ফোন দিয়ে বলছে। আপনার নামে অভিযোগ রয়েছে। আমার সঙ্গে আপনে দেখা করেন। এক কনষ্টেবল এবং এক এএসআই প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মটরবাইক ব্যবহার করছে। ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমল হতে এরা দুইজন জেলা গোয়েন্দা শাখায় রয়েছে। এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন এফএনএসকে বলেন, চলতি মাসে আইনশৃঙ্খার একটু খারাপ হয়েছে। ঈদের আগে আদিবাসি পাড়ায় মাদক ও অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।