প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ১৫ মামলার আসামি, জনমনে আতঙ্ক

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : : | প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:১২ পিএম
প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ১৫ মামলার আসামি, জনমনে আতঙ্ক

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তালিকায় প্রতারক, নারী ও শিশু নির্যাতন, অস্ত্র আইন, চাঁদা দাবি, চুরি, বিস্ফোরক, জাল টাকার ব্যবসা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ নানা অপরাধে ১৫ মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুর্ধর্ষ কুদ্দুস মিয়া।

নানা অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনার মূলহোতা কুদ্দুস ও তার সহযোগিদের কাছে জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নবাসী জিম্মি হয়ে পরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ইতোমধ্যে কবাই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ থেকে আব্দুল কুদ্দুস মিয়াকে বহিঃস্কার করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি কুদ্দুস মিয়ার ছেলে রনি অবৈধভাবে সরকারি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কাটতে গিয়ে কবাই ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল বারেকের দায়ের করা মামলার আসামি হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন। এরপরেও থামছেনা কুদ্দুস ও তার সহযোগিদের অপরাধ কর্মকান্ড। ফলে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার হানুয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেন মিয়ার ছেলে কুদ্দুস মিয়ার (৫৫) ছোটবেলা থেকেই কবাই ইউনিয়নের পেয়ারপুর এলাকায় বসবাস। সে সুবাদে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ওই এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন অপরাধের সাম্রাজ্য। আর এ অপরাধ সাম্রাজ্যের প্রধান নেতৃত্বে রয়েছে তার ছেলে রনি মিয়া।

থানা পুলিশের প্রিভিয়াস কনভিকশন অ্যান্ড প্রিভিয়াস রেকর্ড (পিসিপিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগের মধ্যে ১৫টি মামলার আসামি হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস মিয়া। এরমধ্যে ২০২২ সালের ১০ মে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানায় দায়েরকৃত মামলায় তিনি (কুদ্দুস) ১৪ নম্বর আসামি। এছাড়া বাকেরগঞ্জ থানায় দায়ের করা বাকি ১৪টি মামলায় তিনি আসামি হয়েছেন। এরমধ্যে র‌্যাবের অভিযানে দেড় লাখ টাকার জাল নোট ও বিদেশী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয় কুদ্দুস মিয়ার বড় ছেলে শৈশব মিয়া। ওই মামলায়ও তিনি (কুদ্দুস) আসামি।

এছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য মামলার মধ্যে রয়েছে, ২০০৮ সালের ৪ মার্চ থানায় দায়েরকৃত ৫ নম্বর মামলার এজাহারভূক্ত আসামি। ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত ৭ নম্বর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর  ৫ নম্বর এজাহারভুক্ত মামলার আসামি এবং একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর ২৪ নম্বর মামলার আসামি। ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত ২৩ নম্বর মামলার আসামি। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ৪ নম্বর এজাহারভুক্ত মামলার আসামি। ২০২২ সালের ২১ মার্চ দায়েরকৃত ১৬ নম্বর মামলার আসামি। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক তিনটি মামলায় আসামি কুদ্দুস মিয়া (মামলা নম্বর ৬, ৭ ও ৮)। 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কবাই ইউনিয়নের পেয়ারপুর কমপ্লেক্সে এবং শিয়ালঘুনি চন্দ্রবিন্দু এগ্রো ফার্মা নামের প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এতে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় ওইবছরের ২ সেপ্টেম্বর কুদ্দুস মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় (যার নম্বর-২)। বাকেরগঞ্জের হানুয়া গ্রামের এএইচ ব্রিকস নামের ইটভাটা অফিসের প্রকাশ্যে প্রবেশ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নগদ টাকাসহ প্রায় ১১ লাখ টাকার মালামাল লুটের ঘটনায় চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি কুদ্দুস মিয়াকে প্রধান আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় (যার নম্বর-৯)।

সূত্রগুলো জানিয়েছেন, কুদ্দুস মিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলা চলমান রয়েছে। এরপূর্বে নানা অপরাধের অভিযোগে কুদ্দুস মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর একাধিকবার কারাভোগ করেন। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে তিনি পূর্ণরায় নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরছেন। ফলে এলাকাবাসির কাছে কুদ্দুস মিয়া এখন মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।

একাধিক এজাহারভুক্ত মামলার আসামি কুদ্দুস মিয়া প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করায় কবাই ইউনিয়নে দিন দিন অপরাধ বেড়েই চলেছে। তাই স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অনতিবিলম্বে দুর্ধর্ষ কুদ্দুস মিয়া ও তার সহযোগিদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, কুদ্দুস মিয়া একাধিক মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরো কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ওইসব অভিযোগগুলো এজাহারভূক্ত করা হবে। ওসি আরও জানান, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কুদ্দুস মিয়া আত্মগোপনে থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুস মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এলাকায় কোন অপরাধ কর্মকান্ড হলেই আমার প্রতিপক্ষের লোকজনে পুলিশের সাথে আতাত করে আমাকে সেই মামলার আসামি করছেন। তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বেশির ভাগ মামলায় আদালত থেকে আমি বেকসুর খালাস পেয়েছি। বাকি যেসব মামলা চলমান রয়েছে তা থেকেও আমি বেকসুর খালাস পাবো বলে বিশ্বাস করছি।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে